ডেমোক্রিটাসের মতে, আত্মাকে দেহের
চেয়ে উৎকৃষ্ট ও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভাবা, সর্বক্ষণ
প্রফুল্ল থাকা এবং ঈর্ষাপোষণ থেকে বিরত থাকা সুস্বাস্থ্য ও মহত্ত্বের লক্ষণ। দেহের
চেয়ে আত্মাকে উচ্চ ভাবা উচিত এজন্য যে, আত্মার উৎকর্ষ ও
পরিপূর্ণতা দেহের কলুষতা দূর করে। কল্যাণবোধ বিবর্জিত দৈহিক শক্তি আত্মার পুষ্টি ও
বিকাশের আদৌ সহায়ক নয়। সবরকম উগ্রতা ও আতিশয্য পরিহার করে মধ্যপথের অনুশীলন এবং
মহৎ কিছুর ধ্যান-ধারণার মাধ্যমেই নৈতিক শুভের সন্ধান লাভসম্ভব। সৎমানুষ ও সুনাগরিক
হতে হলে আমাদের অবশ্যই মূলবোধ ও নৈতিকতার অনুশীলন ও চর্চা করতে হবে। বস্তুত,
প্রজ্ঞা ও নৈতিকতার আন্তরিক চর্চাই উদার অপার মনুষ্যত্বের
উৎস।মানুষ সাধারনত ভালমন্দ বিবেচনা না করেই যে কোন নূতন বা অপরিচিত বিষয়ের
বিরোধিতা করে। কেউ কেউ মনে করেন যে ,হিজাব বা পর্দা হচ্ছে
মেয়েদের নিপীড়নের একটি প্রতীক । তারা মনে করেন,যে সকল
মহিলা পর্দা মেনে চলে বা চলতে আগ্রহী তারা মূলত প্রচলিত প্রথার দাসত্ব করেন।এ
ধরনের উদ্ভট বাজে চিন্তা শুধু তারাই মনে করেন যাদের ইসলাম সম্পর্কে ধারণা খুবই
সীমাবদ্ধ।পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অশান্তি,
দাম্পত্য-কলহ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিবাহ-বিচ্ছেদ,
নারী-নির্যাতন ইত্যাদি সবকিছুর পেছনেই একটি প্রধান কারণ হলো
পর্দাহীনতা এবং নর-নারীর অবাধ মেলা-মেশা।
পর্দা নারীকে এক ধরনের অভদ্র দৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।পর্দার মধ্যে আছে আনন্দ ও গৌরব বোধ করার মতো উপাদান। কারন পর্দা শুধু আল্লাহ্র প্রতি নারীদের অনুগত্যের প্রতীকই নয় ,উপরন্ত তা মুসলিম নারীদের মাঝে আন্তরিকতার বাঁধন ।পর্দার মাধ্যমে ইসলাম পালনকারী মহিলারা একে অপরকে চিনতে পারে এবং আন্তরিকতা অনুভব করতে পারে । সর্বোপরি ,পর্দা আমাদের চারপাশের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় আল্লাহ্র কথা, মনে করিয়ে দেয় যে,আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন।ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা বা ক্ষেত্র-বিশেষে নারী-পুরুষের পৃথকীকরণ নারীকে শৃঙ্খলিত করার পরিবর্তে তাঁকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ-ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।
পর্দা নারীকে এক ধরনের অভদ্র দৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।পর্দার মধ্যে আছে আনন্দ ও গৌরব বোধ করার মতো উপাদান। কারন পর্দা শুধু আল্লাহ্র প্রতি নারীদের অনুগত্যের প্রতীকই নয় ,উপরন্ত তা মুসলিম নারীদের মাঝে আন্তরিকতার বাঁধন ।পর্দার মাধ্যমে ইসলাম পালনকারী মহিলারা একে অপরকে চিনতে পারে এবং আন্তরিকতা অনুভব করতে পারে । সর্বোপরি ,পর্দা আমাদের চারপাশের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় আল্লাহ্র কথা, মনে করিয়ে দেয় যে,আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন।ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা বা ক্ষেত্র-বিশেষে নারী-পুরুষের পৃথকীকরণ নারীকে শৃঙ্খলিত করার পরিবর্তে তাঁকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ-ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।
কেউ কেউ থাকেন যে, প্রকৃত পর্দা হলো মনে।
মন ঠিক থাকলে নাকি দেহের পর্দার প্রয়োজন হয় না। ইসলামও একথা স্বীকার করে যে,
মনের পর্দা খুবই জরুরী, পবিত্র কুর’আনও মনের পর্দার উপর
জোর দিয়েছে। কিন্তু,
মন তো দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। দেহকে কেন্দ্র করেই মনের অস্তিত্ব।
তাই, সবার আগে প্রয়োজন দেহের পর্দা।
ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে না
বুঝার কারণে একে নানাভাবে সমালোচনা করে থাকেন। তাঁরা মনে করেন যে, এ-ব্যবস্থার মাধ্যমে
মুসলিম-সমাজে নারীদের উপরে একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যার ফলে, তাঁরা মানবীয় কার্যাদিতে ইচ্ছামত অংশগ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু এই
ধারণা ঠিক নয়। পর্দাপ্রথা এবং নারী-পুরুষের পৃথকীরণের ইসলামী ধারণাকে বুঝতে হলে তা
বুঝতে হবে নারীদের সতীত্বের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং সমাজে নারীদের মর্যাদা
অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে গৃহীত ব্যবস্থাদির প্রেক্ষাপটে, যার
মাধ্যমে ঐসব উদ্দেশ্য লঙ্ঘনের আশঙ্কা তিরোহিত হয়।
পবিত্র কুর’আনে সূরা নূরের ৩১ ও ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ্
তা’আলা বলেন,
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ
وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا
يَصْنَعُونَ
অর্থাৎঃ “তুমি মুমেনদিগকে বল, তাহারা যেন নিজেদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাহাদের লজ্জাস্থান সমূহের হিফাযত করে। ইহা তাহাদের জন্য
অত্যন্ত পবিত্রতার কারণ হইবে। নিশ্চয় তাহারা যাহা করে সেই সম্বন্ধে আল্লাহ ভালভাবে
অবগত আছেন।” (২৪:৩১)
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ
أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا
مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا
يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء
بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ
إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ
نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي
الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى
عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ
مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ
لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থাৎঃ “এবং তুমি মুমেন নারীদিগকে বল, তাহারাও যেন নিজেদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহের হিফাযত করে এবং নিজেদের
সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে, কেবল উহা ব্যতিরেকে যাহা
স্বাভাবিক ভাবেই প্রকাশ পায়; এবং তাহারা ওড়নাগুলিকে
নিজেদের বক্ষদেশের উপর টানিয়া লয়, এবং তাহার যেন তাহাদের
স্বামীগণ অথবা তাহাদের পিতাগণ অথবা তাহাদের স্বামীর পিতাগণ অথবা তাহাদের পুত্রগণ
অথবা তাহাদের স্বামীর পুত্রগণ অথবা তাহাদের ভ্রাতাগণ অথবা তাহাদের ভ্রাতুষ্পুত্রগণ
অথবা নিজেদের ভগ্নি পুত্রগণ অথবা তাহাদের সমশ্রেণীর নারীগণ অথবা তাহারা যাহাদের
মালিক হইয়াছে তাহাদের ডান হাত অথবা পুরুষদের মধ্য হইতে যৌন কামনা বিহীন অধীনস্থ
ব্যক্তিগণ অথবা নারীদের গোপন বিষয় সমূহ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালকগণ ব্যাতীত অপর কাহারও
নিকট নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (২৪:৩২)
ইসলাম মনে করে “Prevention
is better than the cure” অর্থাৎ, দুর্ঘটনা ঘটার আগে তার পথগুলো বন্ধ করাই শ্রেয়তর। ইসলাম নিঃসন্দেহে
পর্দাপ্রথার মাধ্যমে নারী জাতিকে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে এবং
তাঁকে এমন এক নিরাপত্তা দান করেছে, যার ফলে একজন নারী
অধিকতর স্বাচ্ছন্দে তাঁর কাজকর্মসমূহ সমাধা করতে পারে। পর্দা মুসলিম নারীকে
প্রশান্তি দান করেছে। আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবো যে, পর্দা
বা হিজাব পালনকারী একজন নারী অধিকতর নিরুদ্বেগ ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবন যাপন করে
থাকেন। এটা এই কারণে যে, আত্ম-মর্যাদাশীল নারী হওয়ার জন্য
ইসলাম দৈহিক অবয়বের গুরুত্বকে কমিয়ে দিয়েছে। ইসলাম কেবল ব্যক্তির জন্য
দিক-নির্দেশনা প্রদান করে না, বরং সমাজের কল্যাণের জন্যও
দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। আর এক্ষেত্রে পর্দাপ্রথা সমাজের নৈতিক পরিস্থিতিকে
সুরক্ষা করে থাকে। একজন মুসলিম নারীর দায়িত্ব কেবল স্ত্রী, মাতা বা কন্যা হিসেবেই নয়, বরং সমাজে নৈতিকতার
মানদণ্ড রক্ষায়ও পুরুষের পাশাপাশি তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। আর
এইভাবে একজন পর্দানশীন মুসলিম নারী নিজের ও সমাজের কল্যাণ-সাধনের মাধ্যমে মহান
আল্লাহ্ তা’আলার নৈকট্য লাভ করে
থাকেন। একথা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, পর্দা মোটেও পশ্চাৎপদতা বা নারীকে
শৃঙ্খলিত করার কোনো পন্থা নয়। বরং, পর্দা নারীকে
মর্যাদাপূর্ণ আসনে আসীন করেছে।
লেখক,