‘একজন সৎ, তাকওয়াবান ও সুপথগামী মানুষে
রূপান্তরিত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ও মহান বার্তা নিয়ে প্রতি বছরের মতো বছর ঘুরে এ বছরও ফিরে আসছে পবিত্র মাহে রমজান। আল কুরআনে বলা হয়েছে :
রমজান মাস, যে মাসে মানুষের হেদায়েতের জন্য, হেদায়াতের সুস্পষ্ট প্রমাণাদি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন।’ (সূরা আল বাকারা : ১৮৫ ) পবিত্র মাহে রমজানের রোজা শুরুর জন্যও রয়েছে শরিয়তের
সুস্পষ্ট হেদায়াত বা বিধান।
হজরত কুরায়ব রহ: থেকে বর্ণিত যে, উম্মুল ফজল বিনতে হারিস তাকে সিরিয়ায় হজরত মুআবিয়া রা:-এর কাছে পাঠালেন।
(কুরায়ব বলেন) আমি সিরিয়ায় পৌঁছলাম এবং তার প্রয়োজনীয় কাজটি সমাধা করে নিলাম। আমি সিরিয়া থাকা অবস্থায়ই রমজানের চাঁদ দেখা গেল। জুমার দিন
সন্ধ্যায় আমি চাঁদ দেখলাম। এরপর রমজানের শেষ ভাগে আমি মদিনায় ফিরলাম। আবদুুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: আমার কাছে জিজ্ঞেস করলেন এবং চাঁদ সম্পর্কে আলোচনা
করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন দিন চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, আমরা তো জুমার দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজে দেখেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি দেখেছি এবং লোকেরাও দেখেছে। তারা সিয়াম পালন
করেছে এবং মুআবিয়া রা: সওম পালন করেছেন। তিনি বললেন, আমরা কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ
দেখেছি। আমরা সিয়াম পালন করতে থাকব, শেষ পর্যন্ত ৩০ দিন পূর্ণ করব অথবা
চাঁদ দেখব। আমি বললাম, মুআবিয়া রা:-এর চাঁদ দেখা এবং তার সওম
পালন করা আপনার জন্য যথেষ্ট নয় কি? তিনি বললেন, না, যথেষ্ট নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সা: আমাদেরকে এরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, ইফা ৩/২১, হাদিস নং ২৩৯৯ )।
আরেকটি হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা:
থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রেখো এবং চাঁদ
দেখে রোজার মাসের সমাপ্তি করো। আর যদি মেঘের আড়ালের কারণে চাঁদ দেখা না যায়, সাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করো।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। সহিহ
মুসলিমের একটি রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমাদের ওপর মেঘ ছেয়ে যায় তাহলে
৩০ দিন রোজা রাখো।’ (রিয়াদুস সালেহীন ৩/১৫৯ হাদিস নং ১২২১)
আরো একটি হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে
আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমরা রমজানের আগে রোজা রেখো না, বরং চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে শেষ করো। যদি তোমাদের ও চাঁদের মাঝখানে মেঘ প্রতিবন্ধক হয়ে যায় তাহলে ৩০ দিন
পূর্ণ করো।’ (তিরমিজি, রিয়াদুস সালেহীন, ৩/১৬১, হাদিস নং ১২২৫ )
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রমজানের এক দিন বা দু’দিন আগে রোজা না রাখে। তবে যে ব্যক্তির ওই দিনগুলোয় রোজা রাখার অভ্যাস হয়ে গেছে
সে ওই দিনগুলোয় রোজা রাখতে পারে।’ (সহিহ বুখারি ও
সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন ৩/১৬১, হাদিস নং ১২২৪)
চাঁদ দেখার মাসায়িল : সাবান মাসের ২৯
তারিখের সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদ তালাশ করা মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব। যদি চাঁদ দেখা যায় তবে পরবর্তী দিন রোজা রাখতে হবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার
কারণে যদি চাঁদ দেখা না যায়, তবে সাবান মাসকে ৩০ দিন গণনা রাখতে হবে। ঈদুল
আজহার চাঁদের হুকুম ঈদুল ফিত্রের চাঁদের অনুরূপ। (ফাতওয়ায়ে আলমগিরী, দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, ইফা/৩০৩)।
ওই হাদিসগুলো থেকে বোঝা গেল প্রত্যেক
দেশের অধিবাসীদের জন্য তাদের চাঁদ দেখা তাদের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য, অন্য দেশী মানুষের জন্য নয়। সুতরাং কোনো দেশের লোক যদি চাঁদ দেখে তবে এ হুকুম তাদের থেকে
দূরবর্তী লোকদের জন্য প্রযোজ্য হবে
না। যেমন সিরিয়ার চাঁদ মদিনার জন্য গ্রহণযোগ্য হয়নি।
অতএব, সৌদি
আরবসহ অন্য কোনো দেশের চাঁদ দিয়ে বাংলাদেশে রোজা রাখা ও ঈদ করা
শরিয়তসম্মত নয়। সৌদি আরবের সাথে আমাদের দেশের নামাজের সময়সূচির যেমন মিল
নেই, তেমনি
সেহরি-ইফতারির সময়সূচিরও মিল নেই, তাই রোজা ও ঈদের দিনেরও মিল
হবে না।
No comments:
Post a Comment