Monday, February 13, 2023

5 Simple Tips for Effectively Managing Expenses Within Your Monthly Income

Managing expenses can be a daunting task, especially when you are trying to live within your means. It's important to understand that with a little bit of planning and effort, you can effectively manage your expenses and live within your monthly income. Here are some tips that can help:

  1. Create a Budget: A budget is a tool that can help you manage your expenses and keep your spending in check. It's important to determine your monthly income and then allocate the necessary funds to your necessary expenses such as housing, food, transportation, and others.

  2. Track Your Spending: Keeping track of your spending is essential in managing your expenses. You can use a spreadsheet or an app to keep track of your daily expenses. This will give you a clearer picture of where your money is going and help you make adjustments accordingly.

  3. Avoid Impulse Purchases: Impulse purchases can be a big drain on your budget. To avoid these, try to wait 24 hours before making a purchase and consider if you really need the item. This can help you save money and prevent impulse purchases from becoming a habit.

  4. Prioritize Expenses: Decide which expenses are a priority and which ones can be cut back on. For example, eating out may be a luxury expense that can be reduced. On the other hand, paying rent and utilities should be a priority.

  5. Look for Deals and Coupons: By taking advantage of deals and coupons, you can save money on your monthly expenses. Look for discounts and sales at the grocery store and try to use coupons whenever possible.
By following these tips, you can effectively manage your expenses and live within your monthly income. Remember, the key to success is to be consistent and disciplined with your budgeting. Start today and see the difference it can make in your financial future!

Need help creating a budget that works for you? Connect with a budget building expert today! Get personalized advice and guidance to effectively manage your finances. Click the link for more information:

Sunday, December 9, 2018

অতীতের দুঃচিন্তা

অতীত চিরদিনের মতো চলে গেছে। যদি কেউ অতীতের দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বসে বসে চিন্তা ভাবনা করে  তাহলে এতে শুধুমাত্র এক ধরনের পাগলামি দেখতে পাবে। যেই পাগলামি বর্তমান জীবন যাপন করার বা উপস্থিত মুহূর্তে বেচে থাকার দৃঢ় সংকল্পকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো এক ধরনের রোগ।
যাদের দৃঢ় সংকল্প আছে তারা অতীতের সকল দুঃখজনক ঘটনাবলিকে ধুয়ে মুছে ফেলে দিয়ে ভুলে গিয়েছে। এতে ঘটনাগুলো আর কখনো তাদের সত্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কেননা, সেগুলো বিস্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে।
 অতীতের উপাখ্যান শেষ হয়ে গেছে, দুঃখ ওগুলোর ক্ষতিপূরণ করতে পারে না। বিষন্নতা সে গুলোকে সংশোধন করতে পারে না, আর হতাশা কখনও অতীতকে পুনঃজীবন দান করতে পারে না। কেননা অতীত চিরকাল অতীত ও অস্তিত্বহীন।
অতীতের দুঃস্বপ্ন দেখিও না বা যা তুমি হারিয়েছ তার মিছে আশা করিও। অতীতের ভূতের অবির্ভাব হইতে নিজে কে রক্ষা কর। তুমি কি মনে করো যে, তুমি সূর্যকে তার উদয়স্থলে, দুধকে গাভীর উলানে অথবা অশ্রুকে আখিতে ফিরিয়ে দিতে পারবে। অতীত ও অতীতের ঘটনাবলি নিয়ে অনবরত চিন্তা ভাবনা করে তুমি নিজেকে এক অতি ভয়ংকর ও শোভনীয় মানসিক অবস্থায় উপনীত করেছ।
অতীত নিয়ে অতিরিক্ত গবেষনা বর্তমানের অপচয় মাত্র। অতীতের দিনগুলো চলে গেছে এবং শেষ হয়ে গেছে। আর ইতিহাসের চাকা উল্টো দিকে বা পিছন দিকে ঘুরিয়ে তাদের ময়না তদন্ত করে তোমার তো কোন লাভ হবে না।
যেই লোক অতীতের চিন্তায় বিভোর থাকে সেই তো ঐ লোকের মত যেই লোক কাঠের গুড়ো কে করাত দিয়ে চেরাই করতে চায়। যেই ব্যক্তি অতীত নিয়ে কান্না-কাটি, হা-হুতাস ও দুঃখ করত এমন ব্যক্তিকে প্রাচীনকালে বলা হতো, “মৃতকে তাদের কবর থেকে তুলিও না।" আমাদের দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, আমরা বর্তমানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারি না। আমাদের সুন্দর সুন্দর প্রাসাদকে অবহেলা করে আমরা ধ্বংস করে দালানকোঠার জন্য হাউ মাউ করে কান্না কাটি করি। সকল জ্বীন ও ইনসান একত্রে অতীতকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেও তারা অতি নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে।
পৃথিবীর সবকিছুই সম্মুখপানে এগিয়ে চলছে। এই পৃথিবী একটা নতুন ও সন্দর ঋতুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তোমাকেও তাই করতে হবে। তাই অতীতের সকল ধরনের দুঃখ জনক স্মৃতিকে মন থেকে ফেলে দিয়ে বর্তমানকেই গুরুত্ব দাও।

মূল লেখকঃ Shaykh Dr. Aaidh ibn Abdullah al-Qarn

Friday, April 13, 2018

বন্ধু শাহাদাতের বিয়ে উপলক্ষে শুভেচ্ছা বাণী

প্রিয় শাহাদত,
একাকী জীবনের অবসান ঘটিয়ে আজ তুই যুগল জীবনে পদার্পণ করতে যাচ্ছিস। তোর এই নব পথ চলা হউক শন্তিময়, স্বপ্নময়।  আমার হৃদয়ের উষ্ণ অভিনন্দন গ্রহণ করিস। জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। সংসার জীবনে কিংবা যুগল জীবনে বাঁধা আসবেই। সমস্ত বাঁধা ধৈর্য্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করে তোর যুগল জীবনে যেন সুখের সোনালী বন্ধন অটুট থাকে এ আমার প্রত্যাশা।

প্রিয় বন্ধু,
তুই যেই পথ পাড়ি দিতে যাচ্ছিস সেই পথে যেমন রয়েছে যৌবনের উপচে পড়া তৃপ্তি যেমনি আছে গগণ বিদায়ী বেদনা, তবুও যুগ যুগ ধরে সময়ের সাহসী অভিযাত্রীরা তাদের নিজ নিজ সাথীকে  সুখ দুঃখের সঙ্গী করে পাড়ি দিয়েছে এ গিরি প্রান্তর। আল্লাহর দরবারে আমার প্রার্থনা তোর জীবন যেন ফুলে-ফলে ও ছন্দে মুখরিত হয়।

পরিশেষে,
এ দোয়াই করি, তোদের রক্তকণিকা থেকে যেন সৃষ্টি হয় হযরত আবু বক্কর (রাঃ) এর মত সত্যবাদী, হযরত ওমর (রাঃ) এর মতো ন্যায়পরায়ণ, হযরত ওসমান(রাঃ) এর মত দানবীর এবং হযরত আলী (রাঃ) এর মত বিশিষ্ট জ্ঞানী ভবিষ্যত প্রজন্ম।


Saturday, May 13, 2017

সকালের করণীয় বিষয়সমূহ



v প্রতিদিন প্রত্যুষে জেগে উঠুন সুন্দরভাবে অযু করে fresh হয়ে নিন

v সালাত আদায় করুন, কিছু যিকির আযকার করুন আল্লাহ্‌র সমিপে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং বিনয়ভরা হৃদয়ে তার ভান্ডার থেকে চেয়ে নিন

v সারা দিনের করণীয় গুলো সম্পর্কে পরিকল্পনা করুন, মনস্থির করুন

v সকালের নাস্তা সেরে পরম দয়াময় আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন

v মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মতো কথা বলুন, কাজ করুন

v কারো সাথে বিবাদে জড়িয়ে আপনার মূল্যবান সময় এবং শক্তি অপচয় করবেন না

v সব সময় ভাল কাজে সময় ও শক্তি ব্যয় করুন

v প্রতিটি ভালো কাজ এবং ভালো সংবাদের জন্যে পরম করুণাময় আল্লাহ্‌’তায়ালার শুকরিয়া আদায় করুন

v মন্দটাকে ভালোতে বদলে দেবার সংকল্প নিয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন

v দুঃসংবাদে ভেংগে পড়বেন না জীবন সব সময় সমান যায় না আল্লাহর উপর ভরসা করে ভাল কিছুর জন্যে অপেক্ষা করুন দুঃসংবাদের পর অবশ্যি সুসংবাদ পাবেন মনে রাখবেন রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে।

v কাউকেও ঘৃনা করে কিংবা কারো উপর রাগ করে, অথবা কারো প্রতি মনে কষ্ট নিয়ে সময় নষ্ট করার জন্য জীবন নয়। মনরাখবেন জীবন খুবই ছোট সব কিছুর জন্যে সবাইকে ক্ষমা করে দিন, উদার হৃদয়ে

v কঠিন করে কোন বিষয় ভাববেন না সকল বিষয়ের সহজ সমাধান চিন্তা করুন

v কারো সাথে বিতর্কে জড়িয়ে সময় নষ্ট করবেন না কারণ, বিতর্ক কোনো কিছুর সমাধান দেয় না

v অতীতের ভূলগুলো শুধরে নিন কারন অতীত চিরকাল অতীত ও অস্তিত্বহী। তাই অতীতের ব্যর্থতার কথা চিন্তা করে বর্তমানকে নষ্ট করবে না

v মনে রাখবেন জ্ঞানের জগতের তিন স্তর। ১য় স্তরে মানুষ মনে করে সেই সব জানে, ২য় স্তরে এসে অহংকারী হয়ে ঊঠে, কিন্তু চুড়ান্ত স্তরে যখন প্রবেশ করে তখন বুঝে সেই আসলে কিছুই জানে না। ফলে সেই জানার আগ্রহে মত্ত হয়। সব সময় ভাল জিনিশ জানার আগ্রহ নিজের মধ্যে জাগিয়ে তুলবে।

v মন্দ জিনিস জানার আগ্রহ নিজের মধ্য থেকে পুরাপুরি বের কর ফেলুন।

v টিভি সিনেমা কিংবা নাটকের চরিত্রের সাথে নিজেকে কল্পনা করবেন না, কারন এ সবই অভিনয়, বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই। বিশ্বাস রাখবেন মনে আল্লাহ্‌ আপনার জীবনকে উত্তমরুপে সাজিয়ে দিবে, যা আপনার জন্য কল্যাণকর। নিজেকে সিনেমা নাটকের চরিত্রের সাথে মিলাতে গেলেই জীবনে সুখের চেয়ে অসুখী বেশি হবেন। নিজের সুন্দর চরিত্র কালিমা এসে যাবে।

v আপনি কি অসুখী? মনে রাখবেন, আপনার প্রচেষ্টা এবং কাজই আপনাকে সুখ এনে দেবে

v প্রতিদিন নিয়মিত এবং সময়মত স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য সম্পাদন করুন

v প্রতিদিন অভাবীদের কিছুনা কিছু সাহায্য করুন দাতা হোন, গ্রহীতা নয়

v কেউ মনে কষ্ট দিলে মনে কষ্ট পুষে রাখবেন না সময়ের স্রোতে সব কষ্টকে ভেসে ভাসিয়ে দিন তাই কষ্টের ব্যাপারে খোলামেলা আলাপ করুন এবং পরিবারের কাছে সাথে শেয়ার করুন

v সময় যতই খারাপ হোক তা বদলাবেই কোনো অবস্থাতেই ভেংগে পড়বেননা

v মিথ্যা কথা বলা পরিহার করুন। কাউকে মিথ্যা আশা দেওয়া মোটেই উচিত নয়।

v কাউকে কথা দেওয়ার আগে চিন্তা করবেন কথাটা রাখতে পারবেন কিনা। ১০০% নিশ্চিত হয়ে কথা দিন।

v পরিবারের সবার সাথে সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখুন তারাই আপনার সবচেয়ে আপনজন এদের বাইরে কোন ব্যক্তির কাছে কিছু শেয়ার করে নিজের দুর্বলতাকে প্রকাশ করবেন না।

v প্রতিদিন আপনার জন্মদাতা ও গর্ভধারিণী বাবা মায়ের জন্যে দোয়া করুন

v প্রতি রাত ঘুমানোর আগে আপনার জীবনের হিসাব নিন ভাল কাজগুলির জন্য দয়াময় আল্লাহকে শুকরিয়া জানান মন্দগুলির জন্য অনুতপ্ত হোন সেগুলি বদলে দেবার সংকল্প করুন

[লেখার অভ্যাস খুবই কম, ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]



Thursday, April 13, 2017

বিদায়{আটাশ}

মাত্র কয়েকটা অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ, যেটির নাম বিদায়।  তবে শব্দটি পুরাপুরিভাবে বিষাদে ভরা। শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষন্ন হইয়ে ওঠে। এমন কেন হয়? কারণ এই যে, বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ। আর প্রত্যেক বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে নীল কষ্ট। বিদায় জীবনে শুধু একবারই নয়, এক জীবনে মানুষকে সম্মুখীন হতে হয় একাধিক বিদায়ের। সে-ই যে জন্ম লগ্ন থেকে বিদায়ের সূচনা, তারপর জীবন পথের বাঁকে বাঁকে আরো কত বিদায় যে অনিবার্য হয়ে আসে আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ জানে না।

মানবশিশু ভুমিষ্ট হয়েই কাঁদতে থাকে। কেন সে কাঁদে...? সে তো কাঁদবেই। এতদিন মায়ের নাড়ির সঙ্গে তার যে বন্ধন ছিল সেটি যে আজ ছিন্ন হল। এভাবে জীবনের পরতে পরতে ছিন্ন হয় আরো কত প্রিয় বন্ধন! তবে এই বিদায়ে কেউ হাসে আবার কেউ সামনে হেসে চিরস্থায়ী ভাবে কাঁদে যায় আজীবন। কেউ বিদায় নিয়ে যায় সুন্দর কোন লক্ষ্যের দিকে, নতুন স্বপ্নকে বুকে বেঁধে। তবে কিন্তু অন্যদিয়ে আরেক জন......


তবে এ বিদায়ের বেলায় কষ্টের মাঝেও এক রকম আনন্দ থাকতে পারে যদি সান্তনার সংকট না থাকে। আসলে সেইটিরও আমার কাছে বড় অভাব। তার পরেও দেখতে পাচ্ছি বিদায়ী সে বিশেষ ব্যক্তি তার রঙ্গিন স্বপ্ন রঙ্গিন আশার বাস্তবায়ন জন্যই সেই বিদায় তবে তো সেই বিদায়ে সান্ত্বনা পাওয়াই স্বাভাবিক।


মানবজীবনের সর্বশেষ যে বিদায় অবধারিত হয়ে আসে তার নাম মৃত্যু। মৃত্যু এমন এক বিদায়ের নাম, যার দিন-তারিখ কেউ বলতে পারে না। বলা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে আসার সিরিয়াল আর যাবার সিরিয়াল কিন্তু এক নয়। কুরআন মজিদে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন ... “কোনো মানুষ জানে না, সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কোনো মানুষ জানে না, সে কোন স্থানে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ। তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। -সূরা লোকমান আয়াত-৩৪।

Wednesday, July 13, 2016

হিন্দি সিরিয়ালের কুফল

কীভাবে পরিবারের অন্যকে হেনস্থা করা যায়, কীভাবে অন্যের সংসার ভাঙা যায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলের কিংবা বউয়ের সঙ্গে ছেলের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা যায় তার মন্ত্র হিন্দি টেলিভিশন সিরিয়াল থেকেই আমাদের সমাজে ঢুকছে। এবারের প্রতিমঞ্চে ভারতীয় এই টিভি সিরিয়ালের প্রভাবে আমাদের সমাজ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার বেশ কিছু চিত্র উপস্থাপন হল।

আমাদের সমকালীন নাগরিক জীবনে টেলিভিশন মানেই যেন হিন্দি সিরিয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাইলেও কি, না চাইলেও কি সবাইকে এক রকম সেগুলো দেখতে বাধ্য হতে হচ্ছে। কারণ পরিবারের মা, বোন, চাচিরা এখন টেলিভিশন বলতে শুধু হিন্দি সিরিয়ালই বোঝেন। সারা দিন রিমোট হাতে এ ধরনের ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালে বুঁদ হয়ে থাকেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব চ্যানেলে চলতে থাকে বিভিন্ন নামের ধারাবাহিক টিভি সিরিয়াল। আর সিরিয়ালের ফাঁদে পড়ে আমাদের নারীসমাজ পরিবার-পরিজন কিংবা সামাজিক জীবনের সাধারণ দায়িত্বগুলো থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। উপরন্তু তারা বাস্তবতাবিবর্জিত এসব সিরিয়ালের চরিত্রগুলো নিজেদের মাঝে আয়ত্ত করতে ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন। ফলে এই সিরিয়াল থেকেই সমাজে পরকীয়া, বহুবিবাহ কিংবা বাঙালি বহু বছরের ঐতিহ্যগত চিরায়ত পারিবারিক সম্পর্কের মাঝে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

চিত্র-১ : সন্ধ্যা ৬টা বাজে। মিরপুরের বাসিন্দা রফিক আহমদ কেবলই অফিস থেকে ফিরেছেন। স্ত্রীর চিৎকারে ঠিকমতো ফ্রেশ হতে পারেননি। বাইরে এসে দেখলেন তাদের একমাত্র এক বছর বয়সী বাচ্চা মিমি কাঁদছে। স্ত্রী রফিক সাহেবকে বললেন বাচ্চাকে নিয়ে অন্য রুমে বসে খেলতে, কারণ স্টার জলসায় শুরু হয়ে গেছে ‘টাপুর-টুপুর’ নামের সিরিয়ালটি। আজকের পর্বটি নাকি অনেক আকর্ষণীয়, নতুন কিছু ঘটবে বলে জানান তার স্ত্রী। অগত্যা রফিক সাহেব কথা না বাড়িয়ে মেয়ের কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

চিত্র-২ : সীমান্ত স্কয়ারে মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন ধানমণ্ডির সাতমসজিদ এলাকার গোলাম হাসান। সবার পোশাক পছন্দ হলেও তার সপ্তম শ্রেণী পড়-য়া মেয়েটি কোন পোশাকই পছন্দ করছে না। কারণ তার পছন্দ ‘ঝিলিক’ নামের একটি পোশাক, এটা ছাড়া আর কোন কিছুই সে কিনতে নারাজ। তার এক কথা, ঝিলিক জামা লাগবেই। হাসান সাহেব অনেকটা অসহায়ের দৃষ্টি নিয়ে মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে ওই নামের পোশাকটি এখানে নেই। পোশাকটি পরে কিনে দেয়া হবে।
চিত্র-৩ : ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ আনোয়ার স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে ইতি। প্রতিদিনই একটি বিষয় নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। যে যত কথা বলুক না কেন ‘রাশি’ নামের একটি বাংলা এবং স্টার প্লাসের ‘শ্বশুরাল গেন্দা ফুল’ হিন্দি সিরিয়ালটি তাকে দেখতে দিতেই হবে। পরীক্ষা কিংবা বাসা টিউটর পড়াতে এলেও সেটাতে তার মনোযোগ থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দি সিরিয়াল দেখার কারণে এখন তাকে অধিকাংশ সময়ই হিন্দিতে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে, এমনকি সিরিয়ালের বিভিন্ন ডায়ালগ মুখস্থ করে রেখেছে। অন্যদিকে পরীক্ষার রেজাল্টে যথেষ্ট খারাপ হচ্ছে দিন দিন।

কোণঠাসা বাংলাদেশী স্যাটেলাইট চ্যানেল

ভারতীয় টিভি চ্যানেলের মধ্যে স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি বাংলা, জিটিভি, স্টার ওয়ান, সনি, জি স্মাইল কিংবা ইটিভি বাংলায় প্রচারিত সিরিয়ালের অধিপত্যে বাংলা স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বাঙালি নারীদের কাছে টেলিভিশন বলতে এখন এসব চ্যানেলের সিরিয়ালই বোঝাচ্ছে। প্রায় ১৫টির বেশি বাংলাদেশী স্যাটেলাইট চ্যানেল এখন প্রচারিত হচ্ছে। তবে ভারতীয় চ্যানেলের অবাধ প্রবেশ আর চাকচিক্য অনুষ্ঠানের কারণে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এসব চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বিভিন্ন নামের টিভি সিরিয়াল, যার ফলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য অনেকটাই হুমকির সম্মুখীন।

ভেঙে পড়ছে সামাজিক সম্পর্ক
স্টার প্লাস, স্টার ওয়ানের এই হিন্দি সিরিয়ালের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা শহরের পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে নানাবিধ সামাজিক সমস্যা। টিভি সিরিয়ালগুলোর বাস্তবতাবিবর্জিত কাহিনী আর চরিত্রের মধ্যকার হিংসা-বিদ্বেষ, চক্রান্ত কিংবা অপরাধপ্রবণ বিষয় আমাদের বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে। আগে যেখানে সন্ধ্যার পর পরিবার-পরিজনের সবাই মিলে একসঙ্গে গল্পগুজব করত, সবাই সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করত, সেখানে এখন এই হিন্দি সিরিয়াল দেখে মানুষ শিখছে কীভাবে অন্য পরিবারের ক্ষতি করা যায় কিংবা বউমা তার শাশুড়িকে বা শাশুড়ি বউমাকে শায়েস্তা করে তার নানান ফন্দি। স্টার প্লাসের ‘শ্বশুরাল গেন্দা ফুল, ইয়েহ রিশতা ক্যা কেহ রাহে, সাথ নিভানা সাথিয়া বা প্রতিজ্ঞা নামের হিন্দি সিরিয়াল কিংবা অন্যান্য চ্যানেলের প্রচারিত এমনই সিরিয়ালের প্রকোপে পড়ে পরকীয়ার মতো ঘটনাটি সমাজে অহরহ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি সিরিয়ালে দেখানো এই পরকীয়া বা ডিভোর্সের ঘটনায় অনুপ্রাণিত হচ্ছে বাঙালি নারীরা। তার পরেও সরকারিভাবে কোন ধরনের বন্ধের ব্যবস্থা কিংবা উপযুক্ত গবেষণা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সিরিয়াল

হিন্দি সিরিয়ালগুলোয় এমন সব বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে যাতে আমাদের সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। যেমন আগে প্রতিটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়ায় স্টাইল ছিল ঠিক বাঙালিয়ানা, কিন্তু এখন উৎপাদন আর চাহিদার মাঝে সামঞ্জস্য থাকছে না, নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হচ্ছে হিন্দি ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাবে। তা ছাড়া সিরিয়ালে এমন কিছু বিকৃত বিষয় উপস্থাপন করা হচ্ছে যেটি বাংলাদেশ বা বাঙালি জাতিত্বের পরিপন্থী। জি বাংলার আলোচিত সিরিয়াল ‘কেয়া পাতার নৌকা’য় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুসলিম সমাজকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই সিরিয়ালটিতে সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস বিকৃতভাবে দেখানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে এমনভাবে ছোট করে দেখানোর পরও বাংলাদেশ থেকে কোন ধরনের প্রতিবাদের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তার পরও বাঙালি সর্বসাধারণ এই সিরিয়ালের প্রতি উন্মাদপ্রায়।

সিরিয়াল এখন বাজার দখল করেছে

রাজধানীর অভিজাত মার্কেটগুলো এখন ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নায়িকা বা মডেলদের পোশাকের দখলে রয়েছে। বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত স্কয়ার, আলমাস শপিং কমপ্লেক্সসহ উত্তরা, ধানমণ্ডি, গুলশানের মতো অভিজাত এলাকার শপিংমলগুলোতে ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের মডেলদের পোশাকের জন্য হুমড়ি খাওয়া ভিড়। স্টার প্লাস, জি বাংলা, স্টার জলসার মতো চ্যানেলের সিরিয়ালের চাকচিক্য, খোলামেলা আর আভিজাত্যের দর্শনে বাঙালির মাঝে এক ধরনের বিলাসিতার বাসনা সৃষ্টি করেছে। এই পোশাকগুলোর দামও কম নয়, চার হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে সাধারণ পরিবারগুলো যেমন বিপদে পড়ছে তেমনি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পেও দেখা দিয়েছে ধস। মাসাক্কালি, ঝিলিক, আশকারা, খুশি কিংবা প্রতিজ্ঞা নামের পোশাকগুলো এখন বাজার দখল করে রেখেছে। এমনকি এই সিরিয়াল যে চ্যানেলে প্রচারিত হয় তার নামে পর্যন্ত দোকানের নাম রাখা হয়েছে। ধানমণ্ডির সীমান্ত স্কয়ারে তৃতীয় তলায় ‘স্টার প্লাস’ নামে একটি দোকান রয়েছে, যেখানে শুধুই ভারতীয় সিরিয়ালের নামকরা ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে।

সমাজ ও সংস্কৃতি গবেষকরা যা বলেন

হিন্দি টিভি সিরিয়ালগুলোর কারণে সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাঙালি মনন এবং বাংলাদেশীদের মাঝে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। এই টিভি সিরিয়ালের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম লেখক, সংস্কৃতি গবেষক ফজলুল আলমের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে সংস্কৃতি হিসেবে দেখি না। এগুলো পণ্য। এটাকে পণ্য হিসেবে তৈরি করে, পণ্য হিসেবে বিক্রি করে যারা ব্যবসায়ী তারাই কোটি কোটি টাকা বানাচ্ছেন। সমাজের কী হল না হল এটা নিয়ে তাদের ভাবার সময় নেই। তা ছাড়া তারা এই সিরিয়ালগুলো এমনভাবে তৈরি করেন যে সবাই সেটা গ্রহণে বাধ্য হয়ে যায়।’ বাংলাদেশের প্রায় ১৫টি টিভি চ্যানেল থাকা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না, কারণ হিসেবে টেকনিক্যাল অভাবের কথা বলেন এই সাংস্কৃতিক পণ্ডিত। অনুষ্ঠান তৈরির বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বলেন, “অনেক দিন আগে যখন ‘আওয়ারা’ নির্মাণ করা হয়েছিল তখন সবার কথা মাথায় রেখেই সেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আর এখন যে সিরিয়ালগুলো তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো শুধুই ধনীদের চাকচিক্যময় জীবন ব্যবস্থা, পোশাকের বিলাসিতা দেখানো হচ্ছে। এগুলোই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য, সেটাই হিন্দি সিরিয়ালগুলোর অন্যতম লক্ষ্য।” আমাদের জীবন যাপন, উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে এই সিরিয়ালগুলোর বিশাল পার্থক্য রয়েছে, সেটা সবাইকে বিবেচনা করতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সংগৃহিতঃ http://www.somewhereinblog.net/blog/tahasin13/29702785

Wednesday, December 2, 2015

দৃষ্টিভঙ্গি-বদলান-জীবন-বদলে-যাবে

গত শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় দার্শনিক এবং মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস খুব সুন্দরভাবে বলেছেন, আমার প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে একজন মানুষ পারে তার জীবনকে বদলে ফেলতে। এ কথার সত্যতা সম্বন্ধে এখন বিজ্ঞানীমহলেও মিলছে সমর্থন। নিউরোসায়েন্টিস্টরা বলেন, মানুষের মস্তিষ্কের রয়েছে যেকোনো চিন্তাকে বাস্তবায়িত করার এক অসাধারণ ক্ষমতা। মন ও মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিয়ে দশকের পর দশকব্যাপী গবেষণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে  সাইকোনিউরো-ইমিউনলজি নামে বিজ্ঞানের নতুন শাখা  ।

এ বিষয়ে ডা. অ্যালেন  গোল্ডস্টেইন, ডা. জন মটিল, ডা. ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড ও ডা. ই রয় জন দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি মন মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে হার্ডওয়ার আর মন হচ্ছে সফটওয়ার। নতুন তথ্য ও নতুন বিশ্বাস মস্তিষ্কের নিউরোনে নতুন ডেনড্রাইট সৃষ্টি করে। নতুন সিন্যাপসের মাধমে তৈরি হয় সংযোগের নতুন রাস্তা। বদলে যায় মস্তিষ্কের কর্মপ্রবাহের প্যাটার্ন। মস্তিষ্ক তখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নতুন বাস্তবতা উপহার দেয়। নতুন বাস্তবতা ভালো হবে না খারাপ হবে, কল্যাণকর হবে না ক্ষতিকর হবে তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে দেয়া তথ্য বা প্রোগ্রাম এর ভালো-মন্দের উপর। কল্যাণকর তথ্য ও বিশ্বাস কল্যাণকর বাস্তবতা সৃষ্টি করে আর  ক্ষতিকর তথ্য বা বিশ্বাস ক্ষতিকর বাস্তবতা উপহার দেয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনের নতুন বাস্তবতার চাবিকাঠি হচেছ দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত।



বিজ্ঞানীরা বলেন দৃষ্টিভঙ্গি দু’ধরনের। ১) প্রো-একটিভ। ২) রি-একটিভ।
জীবনকে বদলাতে হলে একজন মানুষকে জানতে হবে রি-একটিভ নয়, প্রো-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতে হবে।
একজন প্রো-একটিভ মানুষের বৈশিষ্ট্য ৩ টি :
১. তারা উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

২. তারা কি কি নেই তা নিয়ে হা হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করেন।

৩. তারা সাময়িক ব্যর্থতায় ভেঙে পড়েন না।



নিচের গল্পটি পড়ুন:


বাবা, ছেলে ও গাধার গল্প

বাবা ও ছেলে বিশেষ প্রয়োজনে বাড়ির পোষা গাধাটিকে বিক্রি করার জন্যে হাটের পথে যাত্রা শুরু করল। বাবা, ছেলে ও গাধা তিনজনই হেঁটে যাচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পর তাদেরকে দেখে একজন বললো লোক দুটো কি বোকা। গাধা থাকতে হেঁটে যচ্ছে। একজন তো গাধার পিঠে উঠে আরাম করে যেতে পারে। বাবা ছেলেকে গাধার পিঠে উঠিয়ে দিলেন। ছেলে গাধার পিঠে আর বাবা হেঁটে চলছেন। কিছুদূর যাওয়ার পর আরেকজন বলল, কী বেয়াদব ছেলে। নিজে গাধার পিঠে আরাম করে যাচ্ছে আর বুড়ো বাপকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ মন্তব্য শোনার পর বাবা ও ছেলে স্থান পরিবর্তন করলো। বাবা গাধার পিঠে আর ছেলে হেঁটে। আরও কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর আরেক ব্যক্তি মন্তব্য করল, কী নিষ্ঠুর পিতা! নিজে গাধার পিঠে আরাম করছে আর মাসুম বাচ্চাটাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ মন্তব্য শোনার পর বাবা ও ছেলে দু’জনই গাধার পিঠে উঠল। গাধা চলতে শুরু করল। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর একজন পশুপ্রেমিকের নজরে পড়ল তারা। পশুপ্রেমিক তাদের দেখে আক্ষেপ করে বলতে শুরু করল, কী অত্যাচার! কী অবিচার! একটি গাধা তার উপর দুটি লোক!

বাবা ও ছেলে পড়ল সমস্যায়। কী মুশকিল! গাধার সাথে হেঁটে গেলে দোষ। ছেলে উঠলে দোষ! বাবা উঠলে দোষ! দু’জন উঠলে দোষ! এখন কি করা যায়? বাবা ছেলে দুজন মিলে নতুন এক বুদ্ধি বের করল। বাঁশ ও রশি জোগাড় করল। গাধার চার পা ভালো করে বাঁধল। তারপর পায়ের ফাঁক দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে দিল। বাবা সামনে আর ছেলে পিছনে বাঁশ কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল। গাধা রইল ঝুলে। গাধাকে কাঁধে নিয়ে পুল পার হওয়ার সময় গাধা ভয় পেয়ে চিৎকার করে নড়ে উঠল। বাবা, ছেলে ও গাধা পড়ে গেল খালে। গাধার মেরুদণ্ড ভাঙল। বাবা ও ছেলের ভাঙল পা। গাধা আর বেচা হলো না। বাবা ও ছেলে আহত অবস্থায় ফিরে এল ঘরে।



এই বাবা-ছেলে হলেন রি-একটিভ। রি-একটিভ হলে নিয়ন্ত্রণ তখন নিজের হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। আপনি যখন অন্যের কথায় কষ্ট পান, অন্যের কথায় রেগে যান, অন্যের আচরণে ক্রোধে ফেটে পড়েন, অন্যের তোষামোদিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন, অন্যের চাটুকারিতায় গলে যান, অন্যের কথায় নাচেন, তখন নিয়ন্ত্রণ আর আপনার হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। গল্পের এ বাবা-ছেলের মতোই রি-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় ব্যর্থতা, হতাশা ও অশান্তি সৃষ্টি করে।

প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতিতে উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রদক্ষেপ গ্রহণ। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে অন্যের কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোন কাজ বা আচরণ না করা। সর্বাবস্থায় নিজের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আচরণ ও কর্মপন্থা অবলম্বন করা। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে কি কি নেই তা নিয়ে হা-হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করা। প্রো-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় সাফল্য ও বিজয় ছিনিয়ে আনে।
প্রো-একটিভ মানুষই অন্যকে প্রভাবিত করে, পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে পারে। এই জন্যেই মহামানবরা সবসময় প্রো-একটিভ ছিলেন। নবীজী (স)-র জীবন দেখুন। তিনি সবসময় প্রো-একটিভ ছিলেন। ফলে প্রভাবিত করতে পেরেছেন সবাইকে।

এক বৃদ্ধা প্রতিদিন নবীজী (স)-র পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। উদ্দেশ্য নবীজীকে কষ্ট দেয়া। নবীজী (স) প্রতিদিন কাঁটা সরিয়ে পথ চলতেন। যাতে অন্যের পায়ে কাঁটা না বিঁধে। একদিন পথে কাঁটা নেই। দ্বিতীয় দিনও পথে কাঁটা নেই। নবীজী (স) ভাবলেন, একদিন হয়তো ভুল করে বৃদ্ধা কাঁটা বিছায় নি। দুই দিন তো ভুল হতে পারে না। নিশ্চয় বৃদ্ধা অসুস্থ। তিনি খোঁজ নিলেন। বৃদ্ধা ঠিকই গুরুতর অসুস্থ। আমরা হলে হয়তো বলতাম, ‘বেটি বুড়ি আমার পথে কাঁটা বিছিয়েছিস! আল্লাহ তোকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে।’ কিন্তু নবীজী বৃদ্ধার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করলেন। তার চিকিৎসা ও সেবা শুশ্রূষার ব্যবস্থা করলেন। বৃদ্ধা সুস্থ হয়ে উঠলেন।



সুস্থ হওয়ার পর বৃদ্ধার মনে প্রশ্ন জাগল, যাদের কথায় নবীর পথে কাঁটা বিছিয়েছি, তারা তো কেউ আমাকে দেখতে আসে নি। বরং যাকে কষ্ট দেয়ার জন্যে কাঁটা বিছিয়েছি, তিনিই আমার সেবা শুশ্রূষার ব্যবস্থা করলেন। মানুষ হিসেবে নবীজীই ভালো মানুষ। বৃদ্ধা নবীজীর ধর্ম গ্রহণ করলেন। নবীজী (স) প্রো-একটিভ ছিলেন বলেই বৃদ্ধাকে প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন। বৃদ্ধা যা-ই করুক না কেন, বৃদ্ধার আচরণ দ্বারা নবীজী (স) প্রভাবিত হন নি। নবীজী (স) বৃদ্ধার সাথে সেই আচরণই করেছেন, যা তিনি সঙ্গত মনে করেছেন। সে কারণেই বিরুদ্ধাচরণকারী বৃদ্ধা নবী অনুরাগীতে রূপান্তরিত হলো।



তারা কি কি নেই তা নিয়ে হা হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করেন।



এক ছিলো বুড়ি। তার দুটিই মেয়ে। বড় মেয়ের জামাই একজন ছাতা বিক্রেতা। আর ছোট মেয়ের জামাই সেমাই বানিয়ে বিক্রি করে। এই বুড়িকে কেউ কখনো হাসতে দেখে নি। সারাক্ষণই সে শুধু কাঁদতো। যখন রোদেলা দিন তখন বড় মেয়ের কথা মনে করে। আর বৃষ্টির দিনে ছোট মেয়ের কথা মনে করে। কারণ রোদ হলে বড় মেয়ের জামাইয়ের ছাতার বিক্রি তেমন ভালো হয় না। আর গ্রীষ্ম ফুরিয়ে বৃষ্টির দিন যখন আসে তখন আবার ছোট মেয়ের জামাইয়ের ব্যবসায় মন্দা যায়। দুই মেয়ের কথা ভেবে রোদ বা বর্ষা কোনোসময়ই তার কোনো সুখ ছিলো না।

একদিন এক সাধুর সাথে তার দেখা হলো। সাধু যখন জানতে চাইলেন সে কেন এভাবে সবসময় কাঁদে। সে ঘটনা বললো। সাধু বললেন, এখন থেকে তুমি তোমার চিন্তাটাই বদলে ফেলো। রোদের দিন তুমি তোমার বড় মেয়ের কথা ভাববে না। ভাববে ছোট মেয়ের কথা। কত সুন্দর করে সে এই চমৎকার রোদে সেমাই শুকোচ্ছে। আর গ্রীষ্ম শেষে যখন বর্ষা আসবে, ভাববে বড় মেয়ের কথা। যে এখন দেদারসে ছাতা বিক্রি করছে। তখন ছোট মেয়ের কথা মনে করার দরকার নেই।

বুড়ি তাই করলো। সমাধানও হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি। এখন আর তাকে কাঁদতে হয় না।



২১ বছর বয়সে তিনি ব্যবসায়ে লস করেন। ২২ বছর বয়সে তিনি রাজনীতিতে পরাজিত হন। ২৩ বছর বয়সে আবারও ব্যবসায়ে লস করেন। ২৬ বছর বয়সে হারান প্রিয়তমা স্ত্রীকে । ২৭ বছর বয়সে তার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। ৩৪ বছর বয়সে কংগ্রেস নির্বাচনে হেরে যান। ৪৫ বছর বয়সে সিনেট নির্বাচনে হেরে যান। ৩৭ বছর বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হলো। ৪৯ বছর বয়সে আবারও সিনেট নির্বাচনে পরাজিত হন। এবং ৫২ বছর বয়সে তিনি হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।



তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। এতগুলো হারের পরও যিনি কখনো ভাবেন নি, রাজনীতি আমার জন্যে নয়। আর তাইতো তিনি হতে পেরেছিলেন আমেরিকার সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত প্রেসিডেন্টদের একজন।
সফল মানুষদের জীবনে বাধা বা প্রতিকূলতা নেই, এ কথাটি ঠিক নয়। বরং তাদের জীবনে বাধা বা সমস্যা সাধারণ মানুষদের চেয়েও বেশি এবং বিচিত্রতর। কিন্তু তাদের তফাৎ হচ্ছে তারা কখনো বাধার মুখে ভেঙে পড়েন না। বাধাটাকে জয় করেন।
আসলে কোনো পরাজয়ই পরাজয় নয়, যদি তা মানসিকভাবে আপনাকে পরাজিত করতে না পারে। প্রো-একটিভ মানুষেরা এ সত্যটিই উপলব্ধি করেন এবং সাময়িক ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে কাজ করে যান। ফলে তারা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন।



সুতরাং আপনি যেখানে আছেন সেখান থেকেই শুরু করুন। যা আছে তা নিয়েই শুরু করুন। সাময়িক ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়বেন না। নেতিবাচক লোকদের কথায় প্রভাবিত হবেন না। আপনি জয়ী হবেনই।