Wednesday, December 2, 2015

দৃষ্টিভঙ্গি-বদলান-জীবন-বদলে-যাবে

গত শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় দার্শনিক এবং মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস খুব সুন্দরভাবে বলেছেন, আমার প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে একজন মানুষ পারে তার জীবনকে বদলে ফেলতে। এ কথার সত্যতা সম্বন্ধে এখন বিজ্ঞানীমহলেও মিলছে সমর্থন। নিউরোসায়েন্টিস্টরা বলেন, মানুষের মস্তিষ্কের রয়েছে যেকোনো চিন্তাকে বাস্তবায়িত করার এক অসাধারণ ক্ষমতা। মন ও মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিয়ে দশকের পর দশকব্যাপী গবেষণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে  সাইকোনিউরো-ইমিউনলজি নামে বিজ্ঞানের নতুন শাখা  ।

এ বিষয়ে ডা. অ্যালেন  গোল্ডস্টেইন, ডা. জন মটিল, ডা. ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড ও ডা. ই রয় জন দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি মন মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে হার্ডওয়ার আর মন হচ্ছে সফটওয়ার। নতুন তথ্য ও নতুন বিশ্বাস মস্তিষ্কের নিউরোনে নতুন ডেনড্রাইট সৃষ্টি করে। নতুন সিন্যাপসের মাধমে তৈরি হয় সংযোগের নতুন রাস্তা। বদলে যায় মস্তিষ্কের কর্মপ্রবাহের প্যাটার্ন। মস্তিষ্ক তখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নতুন বাস্তবতা উপহার দেয়। নতুন বাস্তবতা ভালো হবে না খারাপ হবে, কল্যাণকর হবে না ক্ষতিকর হবে তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে দেয়া তথ্য বা প্রোগ্রাম এর ভালো-মন্দের উপর। কল্যাণকর তথ্য ও বিশ্বাস কল্যাণকর বাস্তবতা সৃষ্টি করে আর  ক্ষতিকর তথ্য বা বিশ্বাস ক্ষতিকর বাস্তবতা উপহার দেয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনের নতুন বাস্তবতার চাবিকাঠি হচেছ দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত।



বিজ্ঞানীরা বলেন দৃষ্টিভঙ্গি দু’ধরনের। ১) প্রো-একটিভ। ২) রি-একটিভ।
জীবনকে বদলাতে হলে একজন মানুষকে জানতে হবে রি-একটিভ নয়, প্রো-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতে হবে।
একজন প্রো-একটিভ মানুষের বৈশিষ্ট্য ৩ টি :
১. তারা উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

২. তারা কি কি নেই তা নিয়ে হা হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করেন।

৩. তারা সাময়িক ব্যর্থতায় ভেঙে পড়েন না।



নিচের গল্পটি পড়ুন:


বাবা, ছেলে ও গাধার গল্প

বাবা ও ছেলে বিশেষ প্রয়োজনে বাড়ির পোষা গাধাটিকে বিক্রি করার জন্যে হাটের পথে যাত্রা শুরু করল। বাবা, ছেলে ও গাধা তিনজনই হেঁটে যাচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পর তাদেরকে দেখে একজন বললো লোক দুটো কি বোকা। গাধা থাকতে হেঁটে যচ্ছে। একজন তো গাধার পিঠে উঠে আরাম করে যেতে পারে। বাবা ছেলেকে গাধার পিঠে উঠিয়ে দিলেন। ছেলে গাধার পিঠে আর বাবা হেঁটে চলছেন। কিছুদূর যাওয়ার পর আরেকজন বলল, কী বেয়াদব ছেলে। নিজে গাধার পিঠে আরাম করে যাচ্ছে আর বুড়ো বাপকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ মন্তব্য শোনার পর বাবা ও ছেলে স্থান পরিবর্তন করলো। বাবা গাধার পিঠে আর ছেলে হেঁটে। আরও কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর আরেক ব্যক্তি মন্তব্য করল, কী নিষ্ঠুর পিতা! নিজে গাধার পিঠে আরাম করছে আর মাসুম বাচ্চাটাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ মন্তব্য শোনার পর বাবা ও ছেলে দু’জনই গাধার পিঠে উঠল। গাধা চলতে শুরু করল। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর একজন পশুপ্রেমিকের নজরে পড়ল তারা। পশুপ্রেমিক তাদের দেখে আক্ষেপ করে বলতে শুরু করল, কী অত্যাচার! কী অবিচার! একটি গাধা তার উপর দুটি লোক!

বাবা ও ছেলে পড়ল সমস্যায়। কী মুশকিল! গাধার সাথে হেঁটে গেলে দোষ। ছেলে উঠলে দোষ! বাবা উঠলে দোষ! দু’জন উঠলে দোষ! এখন কি করা যায়? বাবা ছেলে দুজন মিলে নতুন এক বুদ্ধি বের করল। বাঁশ ও রশি জোগাড় করল। গাধার চার পা ভালো করে বাঁধল। তারপর পায়ের ফাঁক দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে দিল। বাবা সামনে আর ছেলে পিছনে বাঁশ কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল। গাধা রইল ঝুলে। গাধাকে কাঁধে নিয়ে পুল পার হওয়ার সময় গাধা ভয় পেয়ে চিৎকার করে নড়ে উঠল। বাবা, ছেলে ও গাধা পড়ে গেল খালে। গাধার মেরুদণ্ড ভাঙল। বাবা ও ছেলের ভাঙল পা। গাধা আর বেচা হলো না। বাবা ও ছেলে আহত অবস্থায় ফিরে এল ঘরে।



এই বাবা-ছেলে হলেন রি-একটিভ। রি-একটিভ হলে নিয়ন্ত্রণ তখন নিজের হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। আপনি যখন অন্যের কথায় কষ্ট পান, অন্যের কথায় রেগে যান, অন্যের আচরণে ক্রোধে ফেটে পড়েন, অন্যের তোষামোদিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন, অন্যের চাটুকারিতায় গলে যান, অন্যের কথায় নাচেন, তখন নিয়ন্ত্রণ আর আপনার হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। গল্পের এ বাবা-ছেলের মতোই রি-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় ব্যর্থতা, হতাশা ও অশান্তি সৃষ্টি করে।

প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতিতে উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রদক্ষেপ গ্রহণ। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে অন্যের কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোন কাজ বা আচরণ না করা। সর্বাবস্থায় নিজের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আচরণ ও কর্মপন্থা অবলম্বন করা। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে কি কি নেই তা নিয়ে হা-হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করা। প্রো-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় সাফল্য ও বিজয় ছিনিয়ে আনে।
প্রো-একটিভ মানুষই অন্যকে প্রভাবিত করে, পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে পারে। এই জন্যেই মহামানবরা সবসময় প্রো-একটিভ ছিলেন। নবীজী (স)-র জীবন দেখুন। তিনি সবসময় প্রো-একটিভ ছিলেন। ফলে প্রভাবিত করতে পেরেছেন সবাইকে।

এক বৃদ্ধা প্রতিদিন নবীজী (স)-র পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। উদ্দেশ্য নবীজীকে কষ্ট দেয়া। নবীজী (স) প্রতিদিন কাঁটা সরিয়ে পথ চলতেন। যাতে অন্যের পায়ে কাঁটা না বিঁধে। একদিন পথে কাঁটা নেই। দ্বিতীয় দিনও পথে কাঁটা নেই। নবীজী (স) ভাবলেন, একদিন হয়তো ভুল করে বৃদ্ধা কাঁটা বিছায় নি। দুই দিন তো ভুল হতে পারে না। নিশ্চয় বৃদ্ধা অসুস্থ। তিনি খোঁজ নিলেন। বৃদ্ধা ঠিকই গুরুতর অসুস্থ। আমরা হলে হয়তো বলতাম, ‘বেটি বুড়ি আমার পথে কাঁটা বিছিয়েছিস! আল্লাহ তোকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে।’ কিন্তু নবীজী বৃদ্ধার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করলেন। তার চিকিৎসা ও সেবা শুশ্রূষার ব্যবস্থা করলেন। বৃদ্ধা সুস্থ হয়ে উঠলেন।



সুস্থ হওয়ার পর বৃদ্ধার মনে প্রশ্ন জাগল, যাদের কথায় নবীর পথে কাঁটা বিছিয়েছি, তারা তো কেউ আমাকে দেখতে আসে নি। বরং যাকে কষ্ট দেয়ার জন্যে কাঁটা বিছিয়েছি, তিনিই আমার সেবা শুশ্রূষার ব্যবস্থা করলেন। মানুষ হিসেবে নবীজীই ভালো মানুষ। বৃদ্ধা নবীজীর ধর্ম গ্রহণ করলেন। নবীজী (স) প্রো-একটিভ ছিলেন বলেই বৃদ্ধাকে প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন। বৃদ্ধা যা-ই করুক না কেন, বৃদ্ধার আচরণ দ্বারা নবীজী (স) প্রভাবিত হন নি। নবীজী (স) বৃদ্ধার সাথে সেই আচরণই করেছেন, যা তিনি সঙ্গত মনে করেছেন। সে কারণেই বিরুদ্ধাচরণকারী বৃদ্ধা নবী অনুরাগীতে রূপান্তরিত হলো।



তারা কি কি নেই তা নিয়ে হা হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করেন।



এক ছিলো বুড়ি। তার দুটিই মেয়ে। বড় মেয়ের জামাই একজন ছাতা বিক্রেতা। আর ছোট মেয়ের জামাই সেমাই বানিয়ে বিক্রি করে। এই বুড়িকে কেউ কখনো হাসতে দেখে নি। সারাক্ষণই সে শুধু কাঁদতো। যখন রোদেলা দিন তখন বড় মেয়ের কথা মনে করে। আর বৃষ্টির দিনে ছোট মেয়ের কথা মনে করে। কারণ রোদ হলে বড় মেয়ের জামাইয়ের ছাতার বিক্রি তেমন ভালো হয় না। আর গ্রীষ্ম ফুরিয়ে বৃষ্টির দিন যখন আসে তখন আবার ছোট মেয়ের জামাইয়ের ব্যবসায় মন্দা যায়। দুই মেয়ের কথা ভেবে রোদ বা বর্ষা কোনোসময়ই তার কোনো সুখ ছিলো না।

একদিন এক সাধুর সাথে তার দেখা হলো। সাধু যখন জানতে চাইলেন সে কেন এভাবে সবসময় কাঁদে। সে ঘটনা বললো। সাধু বললেন, এখন থেকে তুমি তোমার চিন্তাটাই বদলে ফেলো। রোদের দিন তুমি তোমার বড় মেয়ের কথা ভাববে না। ভাববে ছোট মেয়ের কথা। কত সুন্দর করে সে এই চমৎকার রোদে সেমাই শুকোচ্ছে। আর গ্রীষ্ম শেষে যখন বর্ষা আসবে, ভাববে বড় মেয়ের কথা। যে এখন দেদারসে ছাতা বিক্রি করছে। তখন ছোট মেয়ের কথা মনে করার দরকার নেই।

বুড়ি তাই করলো। সমাধানও হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি। এখন আর তাকে কাঁদতে হয় না।



২১ বছর বয়সে তিনি ব্যবসায়ে লস করেন। ২২ বছর বয়সে তিনি রাজনীতিতে পরাজিত হন। ২৩ বছর বয়সে আবারও ব্যবসায়ে লস করেন। ২৬ বছর বয়সে হারান প্রিয়তমা স্ত্রীকে । ২৭ বছর বয়সে তার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। ৩৪ বছর বয়সে কংগ্রেস নির্বাচনে হেরে যান। ৪৫ বছর বয়সে সিনেট নির্বাচনে হেরে যান। ৩৭ বছর বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হলো। ৪৯ বছর বয়সে আবারও সিনেট নির্বাচনে পরাজিত হন। এবং ৫২ বছর বয়সে তিনি হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।



তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। এতগুলো হারের পরও যিনি কখনো ভাবেন নি, রাজনীতি আমার জন্যে নয়। আর তাইতো তিনি হতে পেরেছিলেন আমেরিকার সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত প্রেসিডেন্টদের একজন।
সফল মানুষদের জীবনে বাধা বা প্রতিকূলতা নেই, এ কথাটি ঠিক নয়। বরং তাদের জীবনে বাধা বা সমস্যা সাধারণ মানুষদের চেয়েও বেশি এবং বিচিত্রতর। কিন্তু তাদের তফাৎ হচ্ছে তারা কখনো বাধার মুখে ভেঙে পড়েন না। বাধাটাকে জয় করেন।
আসলে কোনো পরাজয়ই পরাজয় নয়, যদি তা মানসিকভাবে আপনাকে পরাজিত করতে না পারে। প্রো-একটিভ মানুষেরা এ সত্যটিই উপলব্ধি করেন এবং সাময়িক ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে কাজ করে যান। ফলে তারা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন।



সুতরাং আপনি যেখানে আছেন সেখান থেকেই শুরু করুন। যা আছে তা নিয়েই শুরু করুন। সাময়িক ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়বেন না। নেতিবাচক লোকদের কথায় প্রভাবিত হবেন না। আপনি জয়ী হবেনই।

Wednesday, November 18, 2015

ভয় কী? ভয়কে জয় করার উপায় কী? ভবিষ্যতের অহেতুক ভয় হয়। আমিও জানি, যা ভয় করছি তা হবে না কিন্তু এই ভয় আমার বর্তমানকে নষ্ট করছে। কী করব?

নেতিবাচক চিন্তার জননী হচ্ছে ভয়। ভয় এক অদৃশ্য ভূত। অনেকের জীবনেই ভয় তাড়া করে বেড়ায় ছায়ার মতো। এই ভয়ই হচ্ছে আমাদের ব্রেনকে বেশি বেশি কাজে লাগানোর পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। ভয় যে কত ধরনের হতে পারে তার ইয়ত্তা নেই। রোগ ভয়, লোক ভয়, বার্ধক্যের ভয়, প্রিয়জন বিচ্ছেদের ভয়, নিরাপত্তার ভয়, ব্যর্থতার ভয়, দারিদ্রের ভয়, পোকা মাকড়ের ভয়, ভূতের ভয়, মৃত্যুভয় ইত্যাদি।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভয়ের অবস্থান হচ্ছে আমাদের সচেতন মনে। আপনি যদি এই ভয়গুলো কাগজে-কলমে লিপিবদ্ধ করে ফেলেন, তাহলে এগুলোকে যথাযথভাবে শনাক্ত করতে পারবেন। পারবেন এগুলোর উৎস খুঁজে বের করতে। একবার যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারলে এগুলোর আকৃতি হবে লিখিত অক্ষরের সমান। তখন আপনি এ ভয়গুলোর বিরুদ্ধে সহজে পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

আমরা যদি আমাদের সচেতনতার সমুদ্রের গভীরে এই ভয়গুলোকে বিচরণ করতে দেই তাহলে আমাদের অজান্তেই এগুলো লালিতপালিত হয়ে নাদুস-নুদুস হয়ে উঠবে। এগুলোর হাত থেকে আমরা কখনো রেহাই পাব না। গভীর সমুদ্রে অনেক বিশাল বিশাল প্রাণী বাস করে। এগুলোকে যদি কোনোভাবে সমুদ্রের তীরে নিয়ে আসা যায়, তাহলেই এদের মৃত্যু ঘটে। ভয়কেও একইভাবে মোকাবেলা করতে হবে।

ভয় কখনো গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের আলো সহ্য করতে পারে না। ভয় হচ্ছে অন্ধকারের কীট। আলোয় এলেই তা মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি সমস্যার কারণ হচ্ছে অনির্দিষ্ট ভয়।

যদি এমন হয় তবে কি হবে’ এই আতঙ্কই আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। তাই আপনার আশঙ্কাকে কাগজে স্পষ্ট করে লিখে ফেলুন। লেখার পর জিজ্ঞেস করুন, এরপর কী হবে? সবচেয়ে খারাপটাই লিখুন। কাগজে বড় করে লিখুন। যাতে করে আপনি দেখতে পারেন।

ভয়ের হাত থেকে বাঁচার সহজ পথ একটাই। তা হচ্ছে, ভয়ের কথা কাগজে লিখে তা পুড়িয়ে ফেলা। এভাবে আপনি পর্বতপ্রমাণ ভয়কেও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারেন। কারণ অজানা বিষয় যখনই জানা হয়ে যায়, তখনই ভয় তার রহস্য ও শক্তি দুই-ই হারিয়ে ফেলে।

যেমন, অন্ধকারে কাকতাড়ুয়া দেখেও আপনি ভূত ভেবে ভয় পেতে পারেন। কিন্তু একবার টর্চের আলো ফেলুন। ব্যস! সব শেষ। আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ভয়ের উৎস সামান্য খড়কুটো, বাঁশ আর একটা হাড়ি ও একটা ছেঁড়া-ফাটা জামা মাত্র।

তাই ভয়কে মনের গহীনে বাস করতে দেবেন না, তাকে চোখের সামনে তুলে আনুন। কাগজে লিখে ফেলুন। অদৃশ্য দৈত্যকে দৃশ্যমান অক্ষরে পরিণত করুন। আর পুড়িয়ে ফেলুন অক্ষরগুলোকে।

ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া বা ভয়কে কাবু করার আরেকটা পথ হচ্ছে ভয়কে নিয়ে ঠাট্টা করা। ভয়কে জয় করার জন্যে অবজ্ঞা ও অবহেলার চেয়ে সফল অস্ত্র আর কী হতে পারে! আপনি ক্ষমতা না দিলে আপনার ওপর ভয়ের কোনো ক্ষমতা থাকতে পারে না।

যে কাজকে ভয় পান সাহস করে তা করে ফেলুন। ভয় সম্পর্কে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, কেউই ভয় থেকে মুক্ত নন। ভয় পান নি পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই। তবে যারা সফল, যারা বীর তারা ভয়কে মোকাবেলা করেছেন, ভয়কে নিয়ে উপহাস করেছেন, ভয়কে অতিক্রম করেছেন। তারা কখনো ভয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন নি।

আপনার জীবনেও অনেক পরিস্থিতি আসবে, যার মুখোমুখি হতে আপনি ভয় পান। হয়তো আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডকে ভয় পান, নতুন লোকের সাথে আলাপ করতে ভয় পান, দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পান, ইনজেকশন নিতে ভয় পান, বিমানে চড়তে ভয় পান। ঠিক আছে। আপনার এ ভয় নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আপনি শুধু একে মোকাবেলা করুন। ভয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।

যে কাজকে ভয় পাচ্ছেন, সাহস করে কাজটা করে ফেলুন। বিশ্বাস করুন! আপনি সরাসরি ভয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ভয় পালাবার পথ পাবে না। আবার এমনও হতে পারে—আপনি যে কাজকে ভয় পাচ্ছেন সাহস করে করার পর সে কাজেই অপার আনন্দ লাভ করতে পারেন।

যেমন, আপনি বিমান ভ্রমণে ভয় পান। বিমানে কোনোদিন ওঠেন নি। সাহস করে উঠে পড়ুন বিমানে। যখন নিচের দিকে তাকাবেন, পৃথিবীকে যখন আকাশ থেকে দেখবেন তখনকার নতুন দৃষ্টি আপনাকে, আপনার উপলব্ধির ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে।

দাঁতের ডাক্তারের কাছে সাহস করে প্রথমেই চলে যান। হয়তো তিনি আপনার দাঁত ফেলে না দিয়ে রেখে দেয়ার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হতে পারেন। সাহস করে ইন্টারভিউ বোর্ডের সম্মুখীন হোন। আপনার চাকরি বা পদোন্নতির দরজা খোলার এটাই তো পথ।

ব্যর্থতার ভয় আপনাকে পেয়ে বসেছে! এটা আপনাকে কাটাতে হবে। তা না হলে আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন না। সাধারণত দেখা গেছে, ব্যর্থ লোকরাই ব্যর্থতাকে ভয় পায়। কারণ তারা শুরু করতেই সাহস পায় না। আপনি সফল হবেন না বলে বিশ্বাস করলে আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন না। আর কাজ শুরু না করা এক গুরুতর অপরাধ। মনকে বলুন, সাফল্যের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়, ব্যর্থতা অতিক্রমের মাধ্যমেই আসে সাফল্য।

কাজ শুরু করুন। লক্ষ্য উঁচু রাখুন। কথায় বলে, সূর্যের দিকে তীর মারলে তা অন্তত বড় গাছের মগডালে গিয়ে লাগবে। তাছাড়া ব্যর্থতার চিন্তাকেও আপনি ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, একটি উদ্যোগে যদি আশাব্যঞ্জক ফল না পাওয়া যায় তাহলে এর বিকল্প কী পদক্ষেপ নেয়া যায় আগে থেকেই তা ঠিক করে রাখুন। তখন ভয় আপনার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

ভয়কে জয় করার আরেকটি বড় অস্ত্র হচ্ছে ভান করা। ভান করুন, এমনভাবে অভিনয় করুন, যেন আপনার জীবনে ভয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট অকপটে স্বীকার করেছেন—‘আমার জীবনে বহু কিছু ছিল যা নিয়ে আমি প্রথমে ভয় পেতাম। কিন্তু সে কাজগুলো করতে গিয়ে আমি সবসময়ই ভান করতাম যে, আমি আদৌ ভীত নই। ভান করতে করতেই আমার ভয় কমে যেতে লাগল। আমার এখন কোনো কিছু নিয়েই ভয় নেই। ইচ্ছে করলে বেশিরভাগ মানুষের জীবনেই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে’।প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের জীবনে যেটা সত্যি আপনার জীবনেও তা সত্যি হতে পারে। ভয়কে জয় করার জন্যে আপনি একই পন্থা অবলম্বন করুন। জোর করে ভান করুন যে, আপনি ভয় পান নি। আপনি বোঝার আগেই দেখবেন যে, ভানটাই সত্যে পরিণত হয়েছে।

আসলে আমাদের অধিকাংশের জীবনে ভয় হচ্ছে ভবিষ্যতের কাল্পনিক বিপদ নিয়ে। ভবিষ্যতে কী বিপদ হতে পারে, কী ঝামেলা হতে পারে ইত্যাদি। ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা নিয়ে আপনি আপনার বর্তমানের সুন্দর সময়গুলোকে নষ্ট করছেন। আপনি আগামীকালকে যত বেশি ভয় পাবেন, ততই আপনি আজকের দিনটিকে কাজে লাগাতে ও উপভোগ করতে ব্যর্থ হবেন। বর্তমানকে পুরোপুরি কাজে লাগান, বর্তমান নিয়ে আপনি ব্যস্ত থাকুন, ভবিষ্যৎ নিজেই নিজের যত্ন নেবে। জীবনকে, জীবনের গতিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বর্তমানকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগান, উপভোগ করুন। কারণ আপনার জীবনে বর্তমান আর দ্বিতীয়বার ফিরে আসবে না।

Friday, June 26, 2015

ভাল ছাত্র হবার কৌশল

বিজয়ী বীরকেই মানুষ সালাম করে। ক্লাসে ১ম হওয়াটা এমনই এক বিজয়। ক্লাসে ১ম হওয়া আর ভালো রেজাল্ট করার জন্যে বিশেষ মেধার কোনো প্রয়োজন নেই। নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা না করেও ক্লাসে ১ম হওয়া যায়। এসএসসি, এইচ এসসি ও বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল এই সহজ সত্য কথাই বলে। এজন্যে বিশেষ নিয়মে লেখাপড়া করাই যথেষ্ট।

আপনিও পারেন
শান্ত সবুজ এক ছোট্ট গ্রাম। মাঠভরা ফসল, গোয়ালভরা গরু আর উঠোন ভরা হাঁস-মুরগি নিয়ে সচ্ছল গ্রামের প্রতিটি ঘর। এ গ্রামেরই এক গৃহস্থের বাড়িতে একবার এক মুরগি তা দিয়ে ফুটালো অনেকগুলো ছানা। কিন্তু একি! মুরগিছানাদের সঙ্গে ডিম ফুটে বেরুনো ঐ কিম্ভুতকিমাকার ছানাটি কেন? দেখতে হাঁসের মতো। কিন্তু কী কুশ্রী আর কদাকার! কী করে এলো এখানে? কেনই বা সে অন্যদের চেয়ে আলাদা? গৃহস্থ বাড়ির একচিলতে উঠোনে জীবন শুরু হলো তার। কেউ তাকে ভালবাসে না। সুযোগ পেলেই ছোট ছেলেমেয়েরা খোঁচায়, মুরগিছানারা তাড়া করে, কাক ভয় দেখায়। খাবার তার আবর্জনা আর গৃহস্থের ফেলে দেয়া ঝুটাকাঁটা, তা-ও বাকিরা খেয়ে যাবার পর যা পাওয়া যায়। একমাত্র আপন তার মা- মা মুরগি। সব ঝড়ঝাপটার মধ্যেও এই মায়ের কাছেই খুঁজে পায় একটু আশ্রয়। এভাবেই চলছিলো জীবন।

আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে সে। মাঝে মাঝে সে অনুভব করতো জোরে দৌড়াতে গিয়ে সে যেন খানিকটা ভেসেও যেতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে আর কোনো মাথা ঘামায় নি সে। একদিনের কথা। কোনো কারণে সব মুরগিছানারা মিলে তাড়া করলো তাকে। প্রাণপণে ছুটতে ছুটতে গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে এক হ্রদের ধারে গিয়ে থমকে গেল সে। এখন কী করবে সে? আর একটু এগোলেই যে হ্রদে পড়ে যাবে। কিন্তু সে তো কখনো পানিতে নামে নি। পেছানোরও কোনো উপায় নেই। এদিকে তার মা-মুরগিও পেছন পেছন ছুটে এসেছে। হঠাৎ দৃষ্টি গেল ঐ পাড়ের এক ঝাঁক হাঁসের দিকে। কি আশ্চর্য, হুবহু তার মতোই দেখতে! অবাক বিস্ময়ে সে একবার তাকাচ্ছে ঐ হাঁসদের দিকে, একবার তার মায়ের দিকে আর একবার হ্রদের পানিতে তার প্রতিবিম্বের দিকে। সে-তো তার মায়ের মতো নয়, নয় এতদিন যাদের সাথে কাটিয়েছে সেই মুরগিছানাদের মতো। বরং মেরুদেশ থেকে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসা ঐ পরিযায়ী পাখিদের একজন সে। শীর্তাত পরিবেশ থেকে বাঁচতে নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে উড়ে আসা এক মা-পাখির ডিম থেকে ঘটনাচক্রে তার জন্ম হয়েছিলো ঐ গৃহস্থের বাড়িতে। কী অবলীলায় হাসঁগুলো উড়ছে, জলে নামছে! সে-ও তো তাই পারে! বুঝলো সে এই তাড়া খাওয়া, আবর্জনা খুঁটে খাওয়ার জীবন তার নয়, নীল আকাশের উচুঁতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেয়ার দৈহিক সামর্থ্য নিয়ে জন্মেছে সে।

প্রথমবারের মতো নিজেকে জানলো সে। বুঝলো গৃহস্থের উঠোনের ক্ষুদ্র গণ্ডি ছেড়ে তাকে  উড়াল দিতে হবে অনন্ত আকাশে। দুফোঁটা চোখের জল ফেলে মা-মুরগিও তাকে বিদায় জানালো। কারণ ক্ষুদ্র মমতার বন্ধন দিয়ে সে তার ছানার সম্ভাবনাকে গণ্ডিবদ্ধ করতে চায় নি। নভোনীলিমায় ডানা মেলে দিলো হাঁসছানা আত্ম-আবিষ্কার আর আত্ম পরিচয় সৃষ্টির নতুন অভিযাত্রায়। এ হাঁসছানার জীবনের সঙ্গে আপনিও হয়তো মিল খুঁজে পাবেন। ছোটবেলায় হয়তো ভালো রেজাল্ট করতেন। কিন্তু একসময় খারাপ করার পর থেকে নিজেকে খারাপ ছাত্র-ছাত্রীদের দলেই মনে করতে লাগলেন আপনি। মা-বাবা শিক্ষক বা আত্মীয়-বন্ধুদের নেতিবাচক কথায় প্রভাবিত হয়ে হয়তো ভাবতে বসলেন, আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। আর কখনো ভালো করতে পারবো না। অথচ আপনিও ক্লাসে প্রথম হতে পারেন, পারেন গোল্ডেন এ+ পেতে, পৃথিবীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে। পেশাজীবনে যেকোনো আপাত উঁচু লক্ষ্যে পৌঁছুতে। যুক্তিসঙ্গত প্রতিটি চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরিত করতে। কীভাবে, তা-ই বিবৃত হয়েছে এখানে।

ভালো রেজাল্ট করাটা খুবই সহজ।
করতে চাইলেই করা যায়। এজন্যে জিনিয়াস হওয়ার প্রয়োজন নেই। অসাধারণ মেধাবী বা শ্রুতিধর হওয়ার দরকার নেই। গণ্ডায় গণ্ডায় প্রাইভেট টিচার বা ভালো স্কুল কিংবা ধনী বাবা-মায়ের সন্তান হওয়াও ভালো রেজাল্টের শর্ত নয়। ভালো রেজাল্টের জন্যে প্রয়োজন মাত্র দুটি জিনিস। এক- আত্মবিশ্বাস, দুই- অদম্য ইচ্ছা। বিশ্বাস হচ্ছে না? একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
ড. বি আর আম্বেদকর। জন্ম ১৯ শতকের শেষভাগে ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশে এক দলিত পরিবারের ১৪ নম্বর সন্তান হিসেবে। অস্পৃশ্য হওয়ায় স্কুলে তাকে বসতে হতো ক্লাসের বাইরে বারান্দায়। এমনকি তেষ্টা পেলে স্কুলের উচ্চবর্ণের দপ্তরীটি ছোঁয়া বাঁচিয়ে ওপর থেকে পানি ঢেলে না দেয়া পর্যন্ত পানি খাওয়ার অনুমতিটুকুও ছিলো না তার। এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে ১৯ মাইল দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝপথে গাড়োয়ান তাকে গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলো অস্পৃশ্য হয়ে গাড়িতে ওঠার অপরাধে।
এতকিছুর পরও হার মানেন নি। দারিদ্র্য আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে যাওয়া মাত্র ৫ ভাইবোনের ১ জন ছিলেন তিনি এবং একমাত্র তিনিই পেরোন হাইস্কুলের গণ্ডি। ভারতের ইতিহাসে তিনিই প্রথম দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য যিনি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে আইন ও অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রিসহ অর্জন করেন কয়েকটি ডক্টরেট।
দেশে ফিরে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি হয়ে ওঠেন সমকালীন রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জীবনকে উৎসর্গ করেন। স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করেন উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যা অর্জন করে সবার সপ্রশংস সমর্থন।
বাবা আম্বেদকর নামে ভারতবর্ষে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। প্রতিবছর তার জন্ম, মৃত্যুদিবসে হাজারো মানুষ সমবেত হয় তার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবার উদ্দেশ্যে।
আপনার অবস্থা নিশ্চয়ই বাবা আম্বেদকরের চেয়ে খারাপ নয়। তাহলে আপনি কেন পারবেন না?
আপনি যে পারবেন- সে প্রমাণ দিয়েই আপনি পৃথিবীতে এসেছেন।
নিজের মনোদৈহিক প্রক্রিয়াকে একটু বুঝতে চেষ্টা করলেই এ আস্থা ও আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বেড়ে যাবে। নিজের দেহের কথাই ভাবুন। ৫ শতাধিক মাংসপেশী, ২ শতাধিক হাড়, ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন দেহকোষ বা সেলের সমন্বয়ে গঠিত এই শরীরের প্রতিটি সেলে খাবার পৌঁছানোর জন্যে রয়েছে শিরা ও ধমনীর ৬০ হাজার মাইল দীর্ঘ পাইপ লাইন। আর আপনার হার্ট কোনোরকম ক্লান্তি বা প্রতিবাদ ছাড়াই প্রতিদিন এক লক্ষ বার স্পন্দনের মাধ্যমে ১৬ শত গ্যালনেরও বেশি রক্ত পাম্প করে দেহকে সচল রাখছে।
আপনি যদি নিজেকে মূল্যহীন মনে করে থাকেন, ভাবেন আহা অমুকের মতো যদি হতে পারতাম! তাহলে এর চেয়ে বড় ভ্রান্তি কিছুই হতে পারে না। কারণ আপনার মনোদৈহিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্রেন হচ্ছে যেকোনো কম্পিউটারের চেয়েও কমপক্ষে দশ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী। কম্পিউটারের দামের অনুপাতে আপনার ব্রেনের মূল্য কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর আপনি জানেন যে, সভ্যতার সবকিছুর পেছনেই রয়েছে এই ব্রেনের ক্ষমতার সৃজনশীল প্রয়োগ। আর আপনি বিশ্বের ৬ শত কোটি মানুষের মধ্যে এক অনন্য সৃষ্টি। আপনার মতো হুবহু একইরকম দ্বিতীয় কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার ব্রেনও তাই অনন্য।
তাই ক্লাসে ১ম হওয়া থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে আপনি পাওয়ায় রূপান্তরিত করতে পারবেন যদি আপনি বিশ্বাস করেন

মনে রাখার কৌশল
তার আগে জেনে নিন আমরা ভুলে যাই কেন। ভুলে যাওয়ার কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আমাদের নেতিবাচক প্রোগ্রামিং। আমরা মনে করি, আমরা মনে রাখতে পারবো না। দ্বিতীয়ত, আমরা মন দিয়ে জিনিসটি শিখি না এবং বার বার ঝালাই করি না। পরীক্ষায় দেখা গেছে, তথ্যগুলো পরবর্তীতে ব্যবহার না করলে যেকোনো পড়ার ১ দিনের মাথায়ই এর ৭৫% ভুলে যায় মানুষ। তৃতীয়ত, বিক্ষিপ্ত এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে শিখলে এবং টেনশন ও দুশ্চিন্তায় মন আচ্ছন্ন থাকলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হয়। আর আপনার ভুলে যাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে যেভাবে আপনি শিখেছেন ঠিক সেভাবে মনে করতে না পারা। পরীক্ষার সময় প্রশ্ন একটু ভিন্নভাবে এলে আমাদের মনে করতে যে অসুবিধা হয় তা এ কারণেই।

অথচ আমাদের সবারই মনে রাখার ক্ষমতা সমান। পার্থক্যটা হয় স্মৃতিকে চর্চা না করার ফলে। ব্রেনের এই মেমোরি ব্যাংকের কিন্তু কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। প্রতি সেকেন্ডে হাজার খানেক নতুন তথ্য গ্রহণের ক্ষমতা আছে এবং যত নতুন তথ্যই দেই না কেন সে কিন্তু ঠিকই এর জন্যে জায়গা করে দিচ্ছে।
এবার তাহলে জেনে নিন মনে রাখার ক্ষমতাকে আপনি কীভাবে বাড়াতে পারেন।

যা আপনি মনে রাখতে চান তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন বা পড়ুন। একইসময় যদি একটা বিষয়েই মনোযোগ দেন তাহলে এটা সহজ হবে।
আর মনোযোগহীনতার একটা বড় কারণ হলো আগ্রহের অভাব। এজন্যে মনোযোগ অধ্যায়ে দেয়া আগ্রহের টিপসগুলো পড়ুন।
যে তথ্যগুলো মনে রাখতে চান সেগুলোকে নির্দিষ্ট করুন এবং শুধু তাতেই মনোযোগ দিন। যেমন, বইয়ের যে তথ্যগুলো আপনি নতুন দেখছেন বা কঠিন মনে হচ্ছে সেগুলোই হবে আপনার মনোযোগের বিষয়। 
একটি বিষয়কে আপনি যত ভিন্ন দৃষ্টিকোণ এবং ব্যাখ্যা থেকে বুঝবেন তত এটি আপনার মনে রাখা সহজ হবে। পুরনো জানা তথ্যের সঙ্গে মিল-অমিল চিন্তা করে ভাববেন, তত আপনার মনে থাকবে। যেমন, আপনি জানলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনকের নাম হিপোক্রেটিস। প্রথমেই আপনার মনে হলো হিপোক্রেট একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ হলো ভণ্ড বা প্রতারক। কিন্তু আপনার নতুন শেখা এই নামের সঙ্গে এ অর্থের কোনো মিল নেই। বরং উল্টোটাই প্রযোজ্য। কারণ এখনও চিকিৎসকরা পাশ করার পর যে শপথ নেন তাকে বলা হয় হিপোক্রেটিক ওথযার বক্তব্য হলো একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি রোগীকে সাধ্যমতো নিরাময় করার চেষ্টা করবেন, রোগীর গোপন কথা প্রকাশ করবেন না এবং সৎভাবে জীবন যাপন করবেন।
যা মনে রাখতে চান, তাকে একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামোয় রূপান্তরিত করুন। আংশিক না করে বিষয়টি পুরোপুরি শিখতে বা বুঝতে চেষ্টা করুন।
মনে রাখার জন্যে প্রথমবার পড়ার ২/১ দিনের মধ্যেই পড়াকে রিভাইজ করুন। কোয়ান্টা রিডিং পদ্ধতিতে সুযোগ পেলেই চোখ বুলিয়ে নিন। এছাড়া ক্লাস শেষে নিয়মিত ক্লাসনোটে চোখ বুলান।
মনে রাখার ক্ষেত্রে ছবির ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই কোনো জটিল বা ব্যাপক বিষয়কে ছবি, চার্ট বা ডায়াগ্রামে সাজিয়ে নিন।
এছাড়া তৈরি করতে পারেন নানা ধরনের মনে রাখার ছন্দ। যেমন, মুঘল সাম্রাজ্যের পরম্পরা বোঝাতে বাবার হইল একবার জ্বর, সারিল ঔষধেছড়াটি আওড়ালেই বাবর, হুমায়ূন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব প্রমুখ মুঘল বাদশাহদের নাম একের পর এক বলে দেয়া যায়।

ছাত্রজীবন সুখের জীবন যদি না থাকতো .....
পরীক্ষা। অধিকাংশ ছাত্রের জীবনে যেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। শুনলেই মনে হয় এই বুঝি হালুম করে হামলে পড়বে ঘাড়ের ওপর। অথচ পরীক্ষা মানে কিন্তু সুযোগ। নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করার, ওপরের ক্লাসে উন্নীত হবার। একবার ভাবুন আপনাকে কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। সারাবছর আরামসে ঘুরে বেড়াবেন। কিন্তু বিনিময়ে বছরের পর বছর আদু ভাইয়ের মতো পড়ে থাকবেন একই ক্লাসে। কেমন লাগবে তখন? নিশ্চয়ই খুব ভালো না।

পরীক্ষা কে কেন ভয় পাই আমরা?
প্রথম কারণটাই হলো আমাদের প্রস্তুতির অভাব। আর এর সমাধান একটাই । তাহলো বছরের প্রথম থেকে রুটিন করে পড়া। ভালো রেজাল্টের জন্যে করণীয়গুলো অনুসরণ করা। মেডিটেশনে এ রেজাল্টের মনছবি দেখা।
ভয়টা অনেক সময় আশপাশ থেকেও সংক্রমিত হতে পারে আপনার মনে। এটা সাধারণত হয় খুব ভালো বা খুব খারাপ প্রস্তুতি যাদের, তাদের সাথে কথা বললে। যদি এমন হয় যে আপনি এ ধরনের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হন তাহলে এদের এড়িয়ে চলাই ভালো।কারো কারো ক্ষেত্রে ভয়টা আসে প্রচণ্ড মানসিক চাপ থেকে। যদি পরীক্ষায় ভালো না করি, তাহলে, তো ঢি ঢি পড়ে যাবে! আমাকে সবাই কী ভাববে! - এ জাতীয় ভাবনা যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখনই আমরা পরীক্ষাভীতিতে আক্রান্ত হই। এজন্যে নেতিচিন্তার মেডিটেশনটি করতে পারেন। পরীক্ষা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরীক্ষাটাই সব নয়।
আমার পড়ালেখাতেই আনন্দ
কথাটা খুব ভালো। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার ক্লাসের ফার্স্টবয় ফার্স্টগার্ল টাইপের কয়েকজন বাদে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই একথাটা বলতে পারেন না। কারণ তারা পড়ার আনন্দ খুঁজে পান না। পড়াশোনাটা তাদের কাছে নেহায়েত পরীক্ষা পাশের প্রয়োজন। আর এর মূল কারণ হলো মনোযোগ দিতে না পারা।
আনন্দের উৎস : মনোযোগ
এখন অনেক কোচিং সেন্টার খুলছে যারা বলে এখানে অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ যত্ন সহকারে পড়ানো হয়। তাহলে অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রী বলে কি বিশেষ কোনো গোষ্ঠী আছে? আসলে তা নয়। মনোযোগ বা মেন্টাল এনার্জি প্রয়োগ করার ক্ষমতা প্রত্যেকেরই আছে। ক্লাসের সবচেয়ে অমনোযোগী ছেলেটা যে সারাদিন ক্রিকেট নিয়েই থাকে, তাকে দেখুন টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখার সময়। কিরকম মগ্ন আর মনোযোগী! আপনাদের কথাই ভাবুন না! পরীক্ষার আগে যখন ৪ মাসের পড়া করতে হবে ১ সপ্তাহে, তখন কি গভীর আর অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে আপনি পড়তে পারেন।
মনোযোগের উপাদান মাত্র দুটি। এক, আগ্রহ; দুই, পরিবেশ।
আগ্রহ
১. পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা করুন- কী পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন। প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।
২. বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা করুন।
৩. এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে। এনার্জি যত বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে ১ ঘন্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন, বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।
৪. একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৫০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন। কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যা হয়তো ৫ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।
৫. মনোযোগের জন্যে আপনি কোন ভঙ্গিতে বসছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে আরামে বসুন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বন্ধ করুন। চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে পা মেঝেতে লেগে থাকে। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসুন। আপনার চোখ থেকে টেবিলের দূরত্ব অন্তত দু ফুট হওয়া উচিৎ।
৬. পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়াচ্ছে জোর করে তখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না। কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।
৭. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন এবং পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।
৮. টার্গেট মতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন, তা যত ছোটই হোক।
পরিবেশ
১. পড়ার টেবিলটাকে রাখুন দেয়ালমুখো। ছবি, শো-পিস ইত্যাদি সবরকম জিনিস যা মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে পারে সেগুলোকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে রাখুন।
২. চেষ্টা করুন একই জায়গায় সবসময় পড়ার জন্যে। আর পড়ার টেবিলটাকে অন্য আর কোনো কাজে ব্যবহার করবেন না। একইভাবে বিছানায় শুয়ে বা বসে পড়ার অভ্যাস করবেন না।
৩. মোবাইল বন্ধ করে রাখুন। সাইলেন্স বা ভাইব্রেশনে রাখলে একবারে পড়া শেষ করে মোবাইল খুলুন।
৪. টিভি'র সামনে বসবেন না। একবারে শব্দহীন পরিবেশ যদি অস্বস্তিকর হয়, তাহলে দ্রুতলয়ের কোনো মিউজিক খুব কম ভলিউমে দিয়ে রাখতে পারেন। তবে সেটাও ডিস্টার্বিং মনে হলে বন্ধ করে দিন।
৫. পড়ার জায়গায় পর্যাপ্ত আলো যেন থাকে। আলো পড়ার মনোযোগ বাড়ায়।
৬. পড়ার কাজে যে জিনিসগুলো লাগবে তার সবগুলোই নিয়ে বসুন। যাতে বারবার উঠতে গিয়ে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে না হয়।
৭. বন্ধু রুমমেট বা বাসার কেউ আপনার মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে কিনা খেয়াল করুন। তাকে এড়াবার জন্যে কৌশল অবলম্বন করুন।
৮. পড়ার জন্যে লাইব্রেরি, সেমিনার রুম, রিডিং হল ইত্যাদি যেখানে আরো অনেকেই পড়ছে এবং পুরো পরিবেশটাই পড়ার জন্যে অনুকূল সেগুলোকে বেছে নিতে পারেন। আপনি মনোযোগী হতে পারবেন।
মনছবি করবেন কীভাবে
পাখি যেমন তার গন্তব্যে পৌঁছায় ডানায় ভর করে, আপনিও সাফল্যের শিখরে পৌঁছবেন মনছবির ডানা মেলে দিয়ে।
১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১০টা। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাতাসের চেয়ে ভারী শক্তিচালিত এক যান নিয়ে মানুষ সফলভাবে আকাশে উড়লো, হাজার বছর ধরে যা ছিলো শুধু এক অসম্ভব কল্পনা। আর তা করলেন দুভাই- উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট। মজার ব্যাপার হলো, তারা কেউ কিন্তু কোনো বিজ্ঞানী ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংক, পদার্থবিজ্ঞান বা এরোনটিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তাদের কোনো উচ্চতর ডিগ্রি ছিলো না, এমনকি হাইস্কুলের গণ্ডিও তারা পেরোন নি। ডেটনের দুজন বাইসাইকেল মিস্ত্রি কি করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন? এককথায় তার উত্তর মনছবি।
ছোটবেলায় বাবার এনে দেয়া একটি উড়ন্ত খেলনা থেকেই দুভাইয়ের মাথায় প্রথম উড়ে যাওয়ার চিন্তা জাগে। তারপর বছরের পর বছর ধরে গবেষণা, চেষ্টা, ব্যর্থতার পর তারা লাভ করেন এ সাফল্য। এরপর আপনি যখন কোনো বিমানে চড়বেন বা মাথার ওপর দিয়ে বিমান উড়ে যেতে দেখবেন, আপনি অনুভব করার চেষ্টা করবেন কত সাধারণ একটি ভাবনা থেকেই না এ বাস্তবতার শুরু হয়েছিলো। কারণ মন যা ভাবতে পারে, যা বিশ্বাস করতে পারে; মন পারে তা অর্জন করতেও।

৫টি জরুরি হ্যাঁ
১. রুটিন কেবল দিনের মধ্যে সীমিত না রেখে একে সাপ্তাহিক এমনকি মাসিক কর্মসূচিতে পরিণত করুন। অর্থাৎ কাজের পরিধি বড় হলে যেমন (৩৫০ শব্দের রিপোর্ট) একে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলুন। শনিবার রিপোর্টের ভূমিকা, রবিবার ১ম অংশ .. এভাবে এক সপ্তাহে কাজটি শেষ করুন।
২. সময়কে ভাগ না করে কাজকে ভাগ করুন। ধরুন দুপুর ১১.০০টায় স্কুলের জন্যে রওনা হওয়ার আগে আপনাকে বেশ কয়েকটি কাজ করতে হবে। গোসল-নাস্তা-খাওয়া-পেপার পড়া এবং স্কুলের পড়া তৈরি করা। প্রত্যেকটির জন্য সময় ভাগ না করে রুটিনকে এভাবে সাজান। ৮.০০-৯.৩০ : মেডিটেশন-গোসল-খাওয়া-পেপার পড়া; ৯.৩০-১১.০০ : স্কুলের পড়া তৈরি ও স্কুলের জন্য তৈরি হওয়া।
৩. দিন শেষে অবশ্য রুটিনটি নিয়ে একবার বসুন। যেগুলো করতে পারলেন না সেগুলোর পাশে লাল ক্রসচিহ্ন দিন। সেইসাথে পরদিন ঐ না হওয়া কাজগুলো করার চেষ্টা করুন।
৪. নিজের প্রতি সদয় হোন। অনেকগুলো কাজ একদিনে করার মোট কতক্ষণ ব্যয় করছেন প্রতিদিন? খেয়াল রাখুন, আপনার পড়াশোনার সময় যেন এর চাইতে বেশি অন্তত কম না হয়।
৫. দিনে যদি দুটো মহা মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে, যা করতেই হবে, তবে এর একটি যেন হয় মেডিটেশন। দেখবেন বাকি দিন ঠিকমতো কাটবে।


কোয়ান্টা রিডিং- অল্প সময়ে বেশি পড়া
ভালো রেজাল্টের জন্যে একদিকে আপনাকে পড়তে হবে প্রচুর। আবার সময়ও আপনার কম। এজন্যে কোয়ান্টা রিডিং। এ পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের অপ্রয়োজনীয় শব্দগুলো বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় শব্দগুলোই আপনি পড়বেন এবং মনে রাখবেন। যেমন, নিচের প্যারাগ্রাফটি পড়ুন।
বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলের জনগণ নিজ নিজ অঞ্চলের ভাষায় কথা বলে। এগুলো আঞ্চলিক কথ্য ভাষা বা উপভাষা। পৃথিবীর সব ভাষায়ই উপভাষা আছে। এক অঞ্চলের জনগণের মুখের ভাষার সঙ্গে অপর অঞ্চলের জনগণের মুখের ভাষার যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। ফলে এমন হয় যে, এক অঞ্চলের ভাষা অন্য অঞ্চলের লোকের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণের কথ্য ভাষা দিনাজপুর বা রংপুরের লোকদের কাছে খুব সহজবোধ্য নয়। এ ধরনের আঞ্চলিক ভাষাকে বলার ও লেখার ভাষা হিসেবে সার্বজনীন স্বীকৃতি দেয়া সুবিধাজনক নয়। কারণ তাতে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষাভাষীদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে অন্তরায় দেখা দিতে পারে। সে কারণে দেশের শিক্ষিত ও পণ্ডিতসমাজ একটি আদর্শ ভাষা ব্যবহার করেন। বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষিত জনগণ এ আদর্শ ভাষাতেই পারস্পরিক আলাপ আলোচনা ও ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন। বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্যভাষার সমন্বয়ে শিষ্টজনের ব্যবহৃত এ ভাষাই আদর্শ চলিত ভাষা।   
এবার পড়ুন নিচের প্যারাগ্রাফটি
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলের জনগণ নিজ অঞ্চলের ভাষায় কথা বলে। এগুলো আঞ্চলিক কথ্য ভাষা বা উপভাষা। পৃথিবীর সব ভাষায়ই উপভাষা আছে। বিভিন্ন অঞ্চলের মুখের ভাষার যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। অন্য অঞ্চলের লোকের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের কথ্য ভাষা দিনাজপুর বা রংপুরে সহজবোধ্য নয়। সার্বজনীন স্বাকৃতি দেয়া সুবিধাজনক নয়। ভাবের আদান-প্রদানে অন্তরায় দেখা দিতে পারে। দেশের শিক্ষিত ও পণ্ডিতসমাজ একটি আদর্শ ভাষা ব্যবহার করেন। এ ভাষাই আদর্শ চলিত ভাষা।
প্রথম প্যারাগ্রাফের অপ্রয়োজনীয় শব্দগুলো যা প্রথমবার পড়ার পর আর আপনার পড়ার দরকার নেই সেগুলো বাদ দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে পরের প্যারাগ্রাফটি। খেয়াল করে দেখুন, প্রথম প্যারাগ্রাফ থেকে মনে রাখা দরকার এমন সব কথাগুলোই আছে পরের প্যারাগ্রাফে। কোয়ান্টা রিডিং-এ আপনার পড়ার গতি শুধু বাড়বে তাই নয়, বাড়বে মনোযোগ ও বোঝার ক্ষমতা।
SQ3R পড়ার কৌশল
S= surveyপড়তে বসার আগে যা পড়বেন তাতে কোয়ান্টা রিডিং পদ্ধতিতে দ্রুত একবার চোখ বুলানোই সার্ভে। এক্ষেত্রে যে অধ্যায়টি পড়বেন তার শিরোনাম, উপশিরোনাম, ছবি, ক্যাপশন, গ্রাফ, ডায়াগ্রামগুলোতে চোখ বুলান। সার্ভের মধ্য দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন কী পড়তে যাচ্ছেন।
Q=Questionচ্যাপ্টারের শিরোনামগুলোকে প্রশ্নে রূপান্তরিত করুন। কী, কে, কেন, কীভাবে, কখন, অথবা তুলনা কর, পার্থক্য কর, বর্ণনা কর, তালিকা  কর ইত্যাদি পরিভাষায় এই প্রশ্ন করা যেতে পারে। যেমন, বইয়ের শিরোনাম হলো উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান। প্রশ্নে রূপান্তরিত করলে এটি হবে, উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন অবসানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর। প্রশ্ন করার ফলে আপনি সচেতন হয়ে উঠবেন যে কী পড়তে যাচ্ছেন আপনি। আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবার জন্যে এবার পড়া শুরু করুন। যেমন, অধ্যায়ের নাম- আমাদের শরীরের কথা, উপশিরোনাম রক্ত এবং SQ3R প্রশ্ন হলো, রক্ত কী? রক্তের উপাদানগুলো কি কি? এদের কাজ কী?
বইয়ে এই প্রশ্নটির উত্তর হিসেবে দেয়া আছে নিচের প্যারাগ্রাফটি :
রক্ত না থাকলে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না। সে চেষ্টা হতো তেল ছাড়া গাড়ি চালানোর মতো। রক্তের কাজ হচ্ছে শরীরের সর্বত্র প্রয়োজনীয় বস্তু সরবরাহ করা। সেই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় বস্তু বের করে দেয়া। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে ৫ লিটারের মতো রক্ত থাকে। দুরকম কণিকা রক্তে থাকে: লোহিত কণিকা ও শ্বেত কণিকা। বেশিরভাগ লোহিত কণিকা তৈরি হয় হাড়ের মজ্জায়। শ্বেতকণিকার ভূমিকা হচ্ছে শরীরকে রক্ষা করা। তারা জীবাণুদের সঙ্গে লড়াই করে আর এন্টিবডি নামে রাসায়নিক বস্তু সৃষ্টি করে যার কাজ হচ্ছে আততায়ী জীবাণু ধ্বংস করা। রক্তে প্রতি ঘন মিলিমিটারে ৪০ থেকে ৬০ লক্ষ লোহিতকণিকা থাকে। এরাই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আর কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যবস্থা করে।
R= Recite যা পড়েছেন সেগুলোকে জোরে জোরে আওড়ানোই রিসাইট। পড়া নিজেকে শোনান। ঠিকমতো কি হচ্ছে? না হলে আবার পড়ুন। এতে মনে রাখা সহজ হবে।
R= Revise এতক্ষণ যা পড়লেন তা বার বার ঝালাই করাই হলো রিভাইস। নিয়মিত বিরতিতে এই রিভিশন দিতে হবে।
সাফল্য-ব্যর্থতা : পার্থক্য শুধু বিশ্বাসে
বিশ্বাস একটা মজার ব্যাপার। সফল মানুষ এবং ব্যর্থ মানুষ দুয়েরই বিশ্বাস আছে। কিন্তু বিশ্বাসের প্যাটার্নটা একদম আলাদা। বিশ্বাস আসলে চিন্তার যোগাযোগ। যেমন ধরুন, আপনি যখন স্কুলে পড়তেন, পরীক্ষা এলেই জ্বর, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা বা অন্য কোনো না কোনো অসুখ দেখা দিতো। আপনার বাবা বললেন, পরীক্ষা এলেই দেখি তোমার অসুখ-বিসুখ হয়। আপনার প্রথম নিউরোকানেকশন তৈরি হলো। মা বললেন, আমিও এরকম ছিলাম। ওষুধ খেয়ে ভাইভা দিতে যেতাম। আপনার ধারণাটা সমৃদ্ধ হলো। কারণ নিজেকে বোঝালেন যে, পারিবারিকভাবে আপনি হয়তো ব্যাপারটা পেয়েছেন। পরীক্ষা মিস করার পর মা যখন আপনাকে নিয়ে স্কুলে গেল ক্লাসমেটরা বলতে লাগলো তুমি পরীক্ষাকে ভয় পাও? উত্তরটা মনে মনেই দিলেন যে হ্যাঁ, ভয় পাই। টিচার বললো, কি বাপু! পরীক্ষা এলেই দেখি খালি অসুখ-বিসুখ। আপনার মধ্যে বিশ্বাস জন্মালো যে আপনার মধ্যে পরীক্ষাভীতি আছে।
এরপর থেকে পরীক্ষা এলেই আপনি অস্থির হয়ে ওঠেন। কোনো না কোনোভাবে এড়াতে চান। অবশেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বড় ক্লাসে উঠলেও পরীক্ষা মানেই আপনার কাছে মূর্তিমান আতংক অর্থাৎ বিশ্বাসটা শূন্য থেকে আসে নি। আপনার অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি এসবকিছুর একটা যোগাযোগের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে এ বিশ্বাস, ভ্রান্ত বিশ্বাস।
একজন মানুষ সফল হয় বা ব্যর্থ হয় তার বিশ্বাসের কারণে। মুক্ত বিশ্বাস যেমন তাকে সফল করে, তেমনি ভ্রান্ত বিশ্বাস তাকে শৃঙ্খলিত করে, পিছিয়ে দেয়।

ধীরে চলো বৎস
চট করে মনে হতে পারে খরগোশ ভালো। কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বুঝবেন কচ্ছপ ভালো। কারণ একলাফে ছুটে গিয়ে এগোতে পারলেও একটানা হেঁটে ধীরগতির কচ্ছপই সবসময় গন্তব্যে পৌঁছে যায় আগে। আপনি হয়তো ভাবেন, আমার ব্রেনটা তো অত ভালো না। দেরিতে বুঝি। মনে থাকে আরো কম। অমুক তুখোড় মেধাবীদের মতো কি আমি পারবো? অভিনন্দন আপনাকে। কারণ আপনিই পারবেন। সাধারণ মেধার বলেই আপনার পক্ষে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। আপনি কচ্ছপের মতো লেগে থাকতে পারবেন, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক কাজের মাধ্যমে লাভ করবেন সাফল্য।

আর তুখোড় মেধাবী হলেও অধ্যবসায় ছাড়া সফলতা লাভ সম্ভব নয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক মহামনীষী ইবনে সিনা। চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে শুরু করে জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, ভূগোল, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, যুক্তিবিজ্ঞান, সাহিত্য এবং ইসলামী শাস্ত্রসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখায়ই তিনি তার অবদান রেখেছেন। অসাধারণ মেধা এবং স্মরণশক্তির জন্যে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই শিখে ফেলেন তার শিক্ষকদের সবকিছু। এরপর শুরু করেন বাইরের দুনিয়ায় যা আছে তা জানার চেষ্টা। কিন্তু নিজে পড়ে বোঝা এত সহজ হলো না। এরিস্টোটলের মেটাফিজিক্স বুঝতে গিয়ে পড়লেন গভীর গাড্ডায়। একবার দুইবার করে ৪০ বার পড়ে ঝাড়া মুখস্থ হয়ে গেল। কিন্তু বুঝতে পারলেন না একবর্ণ। যখনই কঠিন কিছু বুঝতে পারতেন না, ইবনে সিনার অভ্যাস ছিলো মসজিদে চলে যাওয়া। অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গভীর প্রার্থনায় ডুবে যেতেন। মানুষের কল্যাণে যে জ্ঞান তিনি আয়ত্ত করতে চাচ্ছেন তা বোঝার সামর্থ্য যাতে পরম প্রভু তাকে দেন সেজন্যে। উঠতেন তখনই যখন মনে হতো প্রভু তার প্রার্থনা শুনেছেন। এখানেও ব্যতিক্রম হলো না। হঠাৎ একদিন বাজারে গিয়ে খুঁজে পেলেন মেটাফিজিক্সের ওপর জ্ঞানের আরেক দিকপাল আল ফারাবীর ব্যাখ্যা সম্বলিত একখানা বই। ৩ দিরহাম দিয়ে সে বইটি কিনে ছুটতে ছুটতে ইবনে সিনা চলে এসেছিলেন মসজিদে প্রভুর কাছে শুকরিয়া জানাবার উদ্দেশ্যে।
বাবা-মা আমাকে বোঝে না
আমার বাবা-মা আমাকে বোঝে না, ভালবাসে না, আমার স্বাধীন বিকাশের পথে অন্তরায়, কঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার নিগড়ে বন্দি করে রেখেছে- বাবা-মাকে নিয়ে এরকম অভিযোগ আমরা অনেকেই করি। অনেক সময় তা সঙ্গতও। তারা হয়তো তাদের চিন্তাটা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন বা নিজের অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চাচ্ছেন তার চাওয়া বা পরিবর্তিত সময়ের কথা মাথায় না রেখে।
কিন্তু এই ক্ষোভের নিট রেজাল্ট কী? আরো ক্ষোভ, আরো ব্যর্থতা এবং আরো হতাশা। কাজেই ব্যাপারটাকে এভাবে দেখুন, বাবা-মা গ্রেটেস্ট হতে পারেন, কিন্তু আপনি হলেন লেটেস্ট। লেটেস্টের দায়িত্ব যেহেতু বেশি, তাই বাবা-মা যদি আপনাকে বুঝতে না পারেন, বোঝানোর দায়িত্ব আপনার। তাদেরকে বোঝাতে হবে সেই ভাষায় যা তারা বোঝেন। আর তা হলো শ্রদ্ধার ভাষা, মমতার ভাষা, ভালবাসার ভাষা- যে ভাষার কোনো জেনারেশন গ্যাপ নেই। আর যদি এমন হয় সমবয়সী বা মিডিয়ার চাকচিক্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে আপনার এ চাহিদা এবং যা দেয়ার সামর্থ্য তাদের নেই- তাহলে তাদের প্রজ্ঞাকে আপনার মেনে নেয়া উচিত। 
অনেককাল আগে এক গ্রামের মধ্যখানে ছিলো বিশাল এক আমগাছ। একটি শিশু রোজ এসে সেই গাছের ডালে ঝুলে খেলা করতো। আম পেড়ে খেতো। দুপুরবেলা ক্লান্ত হয়ে সেই গাছের নিচেই খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিতো। গাছও শিশুটির এই আনন্দে যোগ দিতো। কিন্তু একদিন সে এলো না। অপেক্ষা করে করে গাছ বুঝলো আজ আর সে আসবে না। এভাবে কেটে গেল অনেকদিন। হঠাৎ একদিন দেখে একটি বালক মন খারাপ করে বসে আছে গাছের গোড়ায়। সেই শিশু এখন বালক হয়েছে। গাছ জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে প্রিয় বন্ধু আমার? কেন তুমি এতদিন আসো নি? ছেলেটি বললো, আমি এখন বড় হয়েছি। গাছ নিয়ে খেলতে আর আমার ভালো লাগে না। আমার এখন খেলনা দরকার। কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই। গাছ বললো, আহা! কিন্তু বন্ধু টাকা তো আমার কাছে নেই। তুমি না হয় আমার সব আমগুলো পেড়ে নিয়ে যাও। এগুলো বিক্রি করলে নিশ্চয়ই কিছু টাকা পাবে। বালকটি তাই করলো। কিন্তু এরপর আর সে এলো না। গাছ অপেক্ষা করছে। অনেকদিন পর এক সুঠাম দেহের যুবক এল সেখানে। গাছ চিনতে পারলো তাকে। খুশিতে আটখানা হয়ে বললো, এসো বন্ধু আমরা আবার আগের মতো খেলি। রুক্ষস্বরে যুবকটি জবাব দিলো, না খেলার সময় আমার নেই। আমাকে এখন সংসারের জন্যে রুজি-রোজগার করতে হয়। আমার এখন একটা ঘর দরকার। গাছটি বললো, ও আচ্ছা, কিন্তু ঘরতো আমার নেই। তুমি বরং আমার ডালগুলো সব কেটে নিয়ে যাও। এগুলো দিয়েই বানাতে পারবে তোমার ঘর। যুবকটি তাই করলো। যুবককে খুশি দেখে গাছের মনও আনন্দে নেচে উঠলো।
কেটে গেল আবারও অনেকদিন। নিঃসঙ্গ গাছটি এখনও অপেক্ষা করে প্রিয় বন্ধুকে দেখার আশায়। অনেকবছর পর এক মধ্যবয়সী পুরুষ এসে দাঁড়ালো গাছের নিচে। বললো সংসারের ধকল সামলাতে সামলাতে আমি ক্লান্ত। মনটাকে চাঙ্গা করার জন্যে আমি এখন সমুদ্রে বেরিয়ে পড়তে চাই। কিন্তু আমার যে কোনো নৌকা নেই। গাছ বললো, ভাবনা কি বন্ধু। আমার কাণ্ডখানা নিয়ে যাও। এটা দিয়েই নৌকা বানাতে পারবে তুমি। প্রাচীন গাছের বিশাল কাণ্ড ঠেলায় চাপিয়ে চলে গেল সে মধ্যবয়সী পুরুষ।
অনেক অনেক বছর পর লাঠিতে ভর করে ধীর পায়ে গাছের সেই জায়গায় এসে দাঁড়ালো বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক বৃদ্ধ। গাছটি আজ আর নেই। মৃতপ্রায় শেকড়ের একটা ঢিবি ছাড়া গাছের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তবুও সে বলে উঠলো, এসেছ বন্ধু! কিন্তু তোমাকে দেবার মতো আমার যে আর কিছু নেই। ফল নেই, ডাল নেই, কাণ্ড নেই। কী দিয়ে তোমাকে আমি সেবা করবো বল? বৃদ্ধ বললো, ওসব দিয়ে আজ আর আমার কোনো কাজ নেই। আমি এখন বৃদ্ধ অবসন্ন। বিশ্রামের একটু জায়গাই এখন আমার চাওয়া। গাছ বললো, বন্ধু বুড়ো গাছের মরা শেকড়ের চেয়ে ভালো বিশ্র্রামের জায়গা আর কী হতে পারে? এস, ঠেস দিয়ে বসো। সব ভাবনা ভুলে নিশ্চিন্তে আরাম কর।
বৃদ্ধ তাই করলো। অনেকদিন পর হাসলো নিঃসঙ্গ গাছ। কাঁদলোও। তবে এ কান্না আনন্দের। হারানো প্রিয়জনকে কাছে ফিরে পাবার খুশিতে।
এই শিশু থেকে বৃদ্ধে পরিণত হওয়া মানুষটিকে কি আপনার নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে? অকৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে? তাহলে মনে করে দেখুন তো আপনার মাকে কি আপনি কখনো ধন্যবাদ দিয়েছেন আপনাকে ধারণ, লালন এবং পালনের খুঁটিনাটি কাজগুলো বছরের পর বছর ধরে অম্লান বদনে করে যাবার জন্যে? বাবাকে কি কখনো থ্যাংকস জানিয়েছেন কষ্টার্জিত উপার্জনে আপনাকে আজকের অবস্থান গড়ে দেয়ার জন্যে? শাসনের আড়ালে স্নেহপূর্ণ মন নিয়ে আপনাকে সঠিক পথে নির্দেশিত করার জন্যে? হয়তো আপনি মনে করতে পারবেন না। কারণ মা-বাবা আমাদের জন্যে যা কিছু করেন আমরা ধরে নিই যে, এটা তো তাদের দায়িত্ব। কিন্তু ভেবে দেখুন, এর যে কোনো একটি ক্ষেত্রেও যদি তারা দায়িত্বটি পালন না করতেন, কী অবস্থা হতো আপনার! কত অসহায় হয়ে পড়তেন আপনি!

আলস্য : ডেস্টিনেশন হেল
আমি কি পারবো?
ইউনিভার্সিটি অব কালগ্যারির অধ্যাপক পিয়ার্স স্টিল তার ১০ বছর গবেষণার ফল প্রকাশ করেন, দীর্ঘসূত্রিতার একটি প্রধান কারণ হলো কাজটি আমি পারবো’ -এ বিশ্বাস করতে না পারা। যখন একজন শিক্ষার্থী কোনো বিশেষ বিষয়ে নিজেকে দুর্বল মনে করে তখন সেটি শুরু করাটা তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। যেমন লেখালেখির ব্যাপারে হয়তো আপনার মধ্যে জড়তা আছে। এখন যদি এমন কোনো এসাইনমেন্ট থাকে যাতে নিজের আইডিয়াগুলোকে লিখে প্রকাশ করতে হবে, তাহলে আপনার মধ্যে গড়িমসি দেখা যাবে।
এক্ষেত্রে সমাধান হলো মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনার অবচেতন মনের ভয় বা অনিশ্চয়তাকে বের করে আনা। সমস্যাগুলোকে শনাক্ত করুন। এবং সে আলোকে নতুন যোগ্যতা, দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন। এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে এমন কারো সাথে যোগাযোগ করুন। সবসময় মনে করবেন আপনার চেয়ে কম মেধার অনেক মানুষ যদি এটা পেরে থাকে আপনি কেন পারবেন না?
৬টি গুরুত্বপূর্ণ না
১. একটানা কাজের রুটিন করবেন না। যেরকম বিকেল ৫.০০ থেকে রাত ৯.০০ পর্যন্ত পড়া। এরকম না করে প্রথম ১ ঘন্টা পর চা খাওয়ার ৫ মিনিট বিরতি, দ্বিতীয় ঘন্টা পর ৫ মিনিট একটু হাঁটাহাঁটির বিরতি রাখা যেতে পারে।
২. ঘণ্টা মিনিট সেকেন্ড ধরে সময় ভাগ করবেন না। অর্থাৎ ১০.০০-১০.১৫ পর্যন্ত খাওয়া, ১০.১৬-১০.৩০ পর্যন্ত গোসল, ১০.৩১-১০.৪০ পর্যন্ত পেপার পড়া- এমন করতে যাবেন না।
৩. পড়াশুনার ফাঁকে বিরতিতে টিভি দেখা, কম্পিউটার গেমস, ফেসবুক, বন্ধুকে ফোন এগুলো রাখা যাবে না।
৪. ভারি খাওয়া-দাওয়া বা প্রিয় টিভি সিরিয়াল দেখার ঠিক পরপরই পড়তে বসবেন না। এতে মনোযোগ সমস্যা হয়।
৫. পরপর কয়েকদিন রুটিনে লাল দাগ পড়লে হতাশ হয়ে পড়বেন না। বরং তিনদিন এরকম হলে শাস্তিস্বরূপ চতুর্থ দিন প্রিয় সিরিয়ালটি দেখা বন্ধ করুন। নিজের জন্যে শাস্তির ব্যবস্থা করলে নিজেই উপকৃত হবেন।
৬. নিজের দৈহিক ছন্দের বিরুদ্ধে রুটিন করবেন না। যদি রাতে মাথা ভালো কাজ করে তবে রাতে পড়াশুনার সময় বেশি রাখুন। অন্যান্য কাজগুলো দিনে করার চেষ্টা করুন।
পিসমিল সলিউশন ব্যাপারটা জানেন? মাও সে তুং এ ধারণার প্রবক্তা। তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ হয় একটার পর একটা। শত্রুশক্তি ধ্বংস করা যায় একের পর এক। কলকারখানা তৈরি হয় একটার পর একটা। চাষীরা চাষ করে একের পর এক প্লট। আমরা যে খাবার শেষ করতে পারবো তাই নিই, কিন্তু মুঠো মুঠো করেই আমরা তা শেষ করি। সমস্ত খাবার একসঙ্গে খাওয়া অসম্ভব। একেই পিসমিল সলিউশন বলে।'
অর্থাৎ লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে হয় একটু একটু করে। এ লক্ষ্য হাতে পারে বড় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া, মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া। অথবা টার্ম পেপার রেডি করা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই চেষ্টা করুন একটু একটু করতে। একদিনে বসেই ফিজিক্স সিলেবাস শেষ করার চাইতে এক মাস ধরে প্রতিদিন একটানা অর্ধেক চ্যাপ্টার পড়তে পারলে উপকৃত হবেন বেশি। কাজেই রুটিনকেও সেইমতো সাজান। পরীক্ষার তারিখ হাতে পাওয়ার দিনই সতর্ক হোনপরদিন থেকেই  ঐ বিষয়ের জন্য ১/২ ঘণ্টা সময় বাড়তি রাখুন। তাহলে আর পরীক্ষার আগের দিন চুল ছিঁড়তে হবে না।
তাই বলি, পিস পিস (piece) করে করুন, আখেরে পিসে (peace) থাকবেন!
আপনি কি সত্যিই চান?
ভাবছেন এ আবার কেমন প্রশ্ন? চাইবো না কেন? সফল হতে কে না চায়? চায় সবাই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের কাছে সফল হতে চাওয়াটা শুধু চাওয়াতেই সীমাবদ্ধ। তারা চান মাঝে মাঝে পড়ালেখা করবো, টিভি-সিনেমা দেখবো, আড্ডা দেবো, গান শুনবো, গল্পের বই পড়বো। তারপর যদি এ প্লাস না পাই তাহলে কী আর করা। জীবনটাকে তো উপভোগ করতে হবে! কিন্তু একজন ফার্স্টবয় কি এভাবে ভাবে? ভাবে না। তার কাছে ফার্স্ট হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্যে যা করা দরকার, যেভাবে করা দরকার এবং যা বর্জন করা দরকার সে তা-ই করে।
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, যে সাফল্যের মনছবি আমি দেখছি সে সাফল্যকে বরণের প্রস্তুতি কি আমি নিচ্ছি? আর এ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সচেতন হোন এ সময়খাদকগুলোর ব্যাপারে।
বন্ধুর ফাঁদ পাতা ভুবনে
ছাত্রজীবনে বন্ধুদের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারো কারো জীবন প্রভাবিত হয় প্রধানত বন্ধুদের দ্বারাই। যার সাথে আপনার যোগাযোগ বেশি হবে তার দ্বারাই আপনি প্রভাবিত হবেন বেশি। অধিকাংশের জীবনধারা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মতোই হয়। আপনার বন্ধুরা যদি মেধাবী, সহানুভূতিশীল সু-স্বাস্থ্য ও সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়, তাহলে আপনারও তা অর্জন করার সম্ভাবনা থাকবে। আপনার বন্ধুরা যদি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বা রূঢ় আচরণে অভ্যস্ত হয়, লক্ষ্যহীন জীবনে ভেসে বেড়াতে থাকে, ড্রাগ, ধূমপান ও অন্যান্য বদ অভ্যাস বা অনাচার-অত্যাচারে লিপ্ত থাকে বা মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে এ ধরনের বন্ধুরা আপনার জীবনের সুমহান লক্ষ্য থেকে আপনাকে বিচ্যুত করতে পারে। কোনো বন্ধু যদি আপনার জন্যে আনন্দের কারণ না হয়, যদি বেশিরভাগ সময়ই তার সাথে তর্ক-বিতর্কে কেটে যায়, তাহলেও আপনার আচরণে কিছু পরিবর্তন আনা উচিত। হয় তার সাথে দেখা করার সময় কমিয়ে দিন বা কিভাবে তার সাথে মতৈক্য সৃষ্টি করা যায় তা খুঁজে বের করুন। কারণ, ক্রমাগত মতানৈক্য আপনার মানসিক প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারে।
আসলে সহপাঠী মানেই বন্ধু নয়সুসম্পর্ক থাকবে সবার সাথে কিন্তু বন্ধুত্ব হবে তাদের সাথেই যাদের জীবন চেতনা ও লক্ষ্যের সাথে আপনার মিল রয়েছে। আর সবসময় সৎসঙ্ঘে থাকুন। সৎ চেতনায় সঙ্ঘবদ্ধ মানুষই জীবনে ১ম হয়। এজন্যে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো মনে রাখুন:
বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকুন। চিন্তা, মত ও লক্ষ্যে মিল রয়েছে এমন কারো সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। সৎসঙ্ঘে নিবেদিত সদস্যদের বন্ধু হিসেবে অগ্রাধিকার দিন।
ওয়াদা ও আমানতদারি রক্ষা করুন।
প্রতিদানের আশা না করেই সাধ্যমতো সহযোগিতা করুন।
অন্যের প্ররোচনায় সিদ্ধান্ত নেবেন না; সম্পর্কচ্ছেদ করবেন না।
বোকা ও খারাপ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকুন। ক্ষতিকর বন্ধুদের কৌশলে এড়িয়ে চলুন।
অতিরিক্ত বন্ধুবাৎসল্য দেখাতে গিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্যকে বিসর্জন দেবেন না।
মোবাইল
আধুনিক জীবনের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে মোবাইল। কিন্তু আপনি কি সবসময় শুধু প্রয়োজনেই মোবাইল ব্যবহার করছেন? নাকি দিনের একটা বড় সময় কেটে যাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় মোবাইল আলাপে? মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল আপনার মনোযোগের ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে। শুধু প্রয়োজনের কলগুলোই করুন। কোনো মিসকলের বিপরীতে কল না করাই ভালো। কারো যদি বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে সে-ই আপনাকে কল করবে।
টিভি না বোকার বাক্সটিভিকে বলা হয় বোকার বাক্স। কারণ মাত্রাতিরিক্ত টিভি দেখলে বোকা হয়ে যেতে হয়, সৃষ্টি হয় বিনোদন আসক্তি। এটা এখন বিজ্ঞানীদেরও কথা। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের ড. মাইকেল মিলার এক গবেষণায় দেখেছেন, টিভির উত্তেজক দৃশ্য দেখার ফলে রক্তচাপ বাড়ে এবং দেহে স্ট্রেস হরমোন তৈরি হয়। যার প্রভাব থাকে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট ধরে। তাই স্রেফ বিনোদনের মাধ্যম নয়, টিভিকে কাজে লাগান আপনার শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ হিসেবে।

রুটিন করে পড়াশোনা
অনেক সহজে সবকিছু মনে রাখার ইচ্ছে আমাদের সবারই আছে। কিন্তু জানি না কী ভাবে তা সম্ভব।
আমাদের মস্তিষ্ক এক বিচিত্র তথা জটিল কারখানা এবং এর কাজ করার ক্ষমতা অপরিসীম। একে কাজে লাগাতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
খুব সহজ; তবে নিয়মিত চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। মস্তিষ্কের অতি সামান্য অংশই মাত্র ব্যবহার করে থাকি। শতকরা হিসেবে মাত্র ৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ। বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী তথা মেধাবী ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে পেরেছেন ।
মনে রাখার টিপস
১) নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। সহজ কথায়,
আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।
২) এখনই কাজ শুরু করুন, এখনই।
৩) ঘুমের সময় নির্ধারণ করতে হবে এবং তা করতে হবে আপনার
বায়োলজিক্যাল ক্লক অনুযায়ী। নিয়মিত ও যথেষ্ট।
৪) সকাল হচ্ছে উত্তম সময় পড়ালেখা মনে রাখার। আরো অধিক উত্তম সময় হচ্ছে, সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা পূর্বে।
৫) প্রথমে শব্দ করে পড়তে হবে। এরপর ইচ্ছে হলে শব্দহীনভাবে পড়তে পারেন।
৬) প্রথমে সম্পূর্ণ বিষয়টি একবার/দু
বার মনোযোগ সহকারে পড়ে তারপর দুতিন লাইন করে মুখস্ত করুন ।
৭) একটানা অনেকক্ষণ পড়তে হলে মাঝখানে বিরতি দেয়া উত্তম। এক কিংবা দু
ঘণ্টা পর পর অন্তত পাঁচ মিনিট বিরতি দিতে হবে। এ সময় একটা গান শুনতে পারেন কিংবা সটান শুয়ে পড়তে পারেন।
৮) পছন্দের তালিকায় মিষ্টি জাতীয় খাবার রাখুন। চিনির শরবত, সঙ্গে লেবু। কিংবা শুধু লেবুর শরবত। গ্লুকোজ পানিও পান করতে পারেন। সাবধান! ডায়াবেটিক থাকলে অবশ্যই এসব পরিহার করুন।
স্যালাইন কখনোই খাবেন না। খাবার তালিকায় সবুজ শাকসব্জি, ফলফলাদি রাখুন । স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার খেতে চেষ্টা করুন । ধূমপান পরিহার করুন।
৯) অল্প হলেও প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়
ন ।
১০) কম হলেও প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা শরীরচর্চা করুন।
১১) প্রতিদিন অন্তত ৫-৭ মিনিট মন খুলে হাসুন।
১২) অযথা কথা পরিহার করুন।
১৩) অতিরিক্ত রাত করে ঘুমোতে যাবেন না ।
১৪) পড়াতে মন না বসলেও প্রথম প্রথম অনিচ্ছা সত্ত্বেও পড়তে বসুন ।


এস এম জাহেদ,
সোনাকানিয়া, সাতকানিয়া
চট্টগ্রাম