🕌 ইসলামী দৃষ্টিকোণে গুদাম মালিকানা ভিত্তিক সুদী লেনদেন বনাম হালাল বিকল্প (মুশারাকা মডেল)

 

প্রচলিত লেনদেনের সারসংক্ষেপ ও কেন এটি হারাম

🔍 লেনদেনের চিত্র:

একজন ব্যক্তি তার মালিকানাধীন গুদাম রেখে টাকার দরকারে আরেকজনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। বিনিময়ে বলছেন, “তুমি গুদামের মালিক”। কিন্তু গুদামটি এখনো মূল মালিক নিজেই ব্যবহার করছেন, আর বিনিয়োগকারীকে মাসে ৪,৫০০ টাকা করে দিচ্ছেন।

❗এই লেনদেনের বাস্তবতা:

• গুদাম ব্যবহার করছেন মূল মালিক।

• বিনিয়োগকারী কোনো শ্রম বা ব্যবহার ছাড়াই প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অর্থ পাচ্ছেন।

• মালিকানা কাগজে দিলেও, বাস্তবে কোনো নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহার নেই বিনিয়োগকারীর।

• এই চুক্তির ফলাফল: ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে মাসে ৪,৫০০ টাকা নির্ধারিত লাভ = বার্ষিক ৫৪,০০০ টাকা (১৮%)।

🚫 কেন এটি হারাম?

1. সুদের সংজ্ঞায় পড়ে (رِبَا):

রাসুল (সা.) বলেন:

"كل قرض جر نفعا فهو ربا"
“প্রত্যেক ঋণ, যা বাড়তি সুবিধা আনে—তা সুদ।”
— (বাইহাকী)

এখানে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত ৪,৫০০ টাকা মাসে নেওয়া হচ্ছে—যেটি সরাসরি সুদ।

2. গুপ্ত সুদী চুক্তি (Hidden Interest-Based Loan):

মালিকানা কেবল কাগজে-কলমে; বাস্তবে কিছুই হস্তান্তর হয়নি। এটি মূলত সুদ লেনদেনকে বাণিজ্য বা অংশীদারিত্বের ছদ্মবেশ দেওয়া।

3. কুরআনের নিষেধাজ্ঞা:

"وأحل الله البيع وحرم الربا"
“আল্লাহ বেচাকেনা হালাল করেছেন, আর সুদ হারাম করেছেন।”
— সূরা বাকারা (২:২৭৫)

4. সুদ গ্রহণকারী, দানকারী, সাক্ষী ও লেখক—সবই গুনাহগার:

"لعن رسول الله آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه"
“রাসুল (সা.) সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষী ও লেখক—সকলের উপর অভিশাপ দিয়েছেন।”
— (সহীহ মুসলিম)

⚠️ অতএব:

এই ধরণের লেনদেন বাস্তবে সুদেরই একটি রূপ। ইসলাম এমন চুক্তি স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে—even যদি তাকে অন্য নামে সাজানো হয়।

---

শরীয়তসম্মত বিকল্প — মুশারাকা ভিত্তিক অংশীদারিত্ব মডেল

🎯 ইসলাম কি চায়?

ইসলাম চায় ন্যায়সংগত, ঝুঁকি-বণ্টনভিত্তিক ও বাস্তব সম্পৃক্ততা সম্পন্ন লেনদেন—যেখানে কেউ কেবল “টাকা দিয়ে টাকা কামানো”র চেষ্টা না করে প্রকৃত ব্যবসায় অংশ নেয়।

📘 মুশারাকা (مشاركة) কী?

মুশারাকা অর্থ অংশীদারিত্ব ভিত্তিক ব্যবসায়িক চুক্তি, যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একটি সম্পত্তি বা ব্যবসায় পুঁজি দিয়ে মালিকানা ভাগ করে নেয় এবং লাভ-ক্ষতি ভাগ হয় তাদের বিনিয়োগ অনুযায়ী।

---

✅ উদাহরণ: মুশারাকা মডেলে ঐ লেনদেন কেমন হবে?

ধরি:

• গুদামের বাজার মূল্য = ১৫ লাখ টাকা।

• বিনিয়োগকারী ৩ লাখ টাকা দিলে তিনি হবেন ২০% মালিক।

• তিনি চাইলে গুদামের ২০% ব্যবহার করতে পারবেন, অথবা মূল মালিক তা ব্যবহার করলে ভাড়া/লাভ ভাগ দেবেন।

ভাড়া দিয়ে আয় হলে:

• ধরা যাক মাসে গুদাম ভাড়া আসে = ২০,০০০ টাকা।

• বিনিয়োগকারী পাবেন = ২০% × ২০,০০০ = ৪,০০০ টাকা/মাস।

• যদি ভাড়া না আসে, তাহলে কেউ কিছু পাবেন না — ঝুঁকি ও লাভ উভয়ে বণ্টন হবে, এটিই ইসলামের মূলনীতি।

বিনিয়োগ ফেরত:

• চুক্তিতে লেখা থাকতে পারে: ২ বছর পর মূল মালিক বিনিয়োগকারীর অংশ কিনে নেবেন বাজারমূল্য বা পূর্ব-নির্ধারিত মূল্যে।

🔚 উপসংহার

• ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যে ‍সুবিধা দিয়েছে, তবে সুদ-ভিত্তিক বা ফাঁকি দিয়ে টাকা কামানো নিষিদ্ধ করেছে।

• কেউ টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট মাসিক আয় দাবি করলে—এটি সুদে পরিণত হয়।

• অথচ, একই উদ্দেশ্য মুশারাকা বা ইজারা চুক্তির মাধ্যমে হালালভাবে অর্জন করা সম্ভব।

"যদি আমরা হালাল পদ্ধতি অনুসরণ করি, তবে বরকত আসে; হারাম পন্থা বেছে নিলে ক্ষতিই আসে, দুনিয়াতেও, আখিরাতেও।"